প্রথমেই বলে রাখি ফ্রিল্যান্সিংয়ে ভালো করার একমাত্র মূলমন্ত্র হলো আপনার ডেডিকেশন এবং নতুন নতুন জিনিস শিখার আগ্রহ। এখানে বাস্তব ধর্মী অভিজ্ঞতার আলোকে নিম্নোক্ত কিছু পয়েন্ট আমি এখানে তুলে ধরলাম, আপনারা চাইলে পড়তে পারেন। তবে এই বিষয়টি অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং-এ যারা একটু ভালো করছেন তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা কেবল শুরু করেছেন তারা অভিজ্ঞতার আলোকে এই লেখাটা নিজেদের সংগ্রহে রাখতে পারেন।
কাজের ধরন বা যেসব কাজের গুরুত্ব বেশি:
প্রথমেই যে বিষয়টি আসে সেটা হল কাজের ধরন, আসলে আপনাকে কোন ক্যাটাগরিতে কাজ করতে হবে বা কোন ক্যাটাগরিতে দীর্ঘমেয়াদি একজন ক্লায়েন্ট সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় সেই বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ কোন একটি প্রজেক্টে আপনি নিয়োগ হওয়ার পর যেন পুনরায় সেই কাজের ধারা অব্যাহত থাকে। এই লিঙ্কে গিয়ে পড়ে নিতে পারেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে যে কাজ শিখতে পারেন বা যেসব ক্যাটাগরি কাজের গুরুত্ব বেশি।
ক্লায়েন্ট বুঝতে পারার ক্ষমতা বা কৌশল:
জবে নিয়োগ হওয়ার আগে থেকে অর্থাৎ ইন্টারভিউ পর্ব থেকেই আপনাকে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ক্লায়েন্টের প্রতিটা কথা গুরুত্ব সহকারে শুনবেন, প্রয়োজনে বারবার পড়বেন। ক্লায়েন্ট কি বোঝাতে চাচ্ছে এটা যদি আপনি অল্পতেই বুঝতে পারেন এবং ক্লায়েন্টের সাথে কথোপকথনের সময় যে বিষয়টি নিয়ে আপনি কাজ করছেন, সে বিষয়ে যদি আপনার এডভান্স ধারণা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্লায়েন্টের সাথে শেয়ার করবেন। মোটকথা ক্লাইন্টের নজরে আসতে হলে আপনাকে একটু বেশি পরিশ্রম এবং ডেডিকেশন ধরে রাখতেই হবে। ক্লায়েন্টকে বুঝাতে চেষ্টা করতে হবে আপনি তার কাজের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই লিঙ্কে গিয়ে পড়ে নিতে পারেন আমি কিভাবে ক্লায়েন্ট খুঁজে পাবো।
ক্লায়েন্ট এর পক্ষ থেকে কোনো একটি দলের সাথে কাজ:
যে কোন প্রজেক্টে আপনি একটি ছোট বা বড় টিমের সাথে দলগতভাবে কাজ করতে পারেন। তবে সেখানে একটি বিষয় অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে টিমের অন্য সদস্যদের কে বুঝার ক্ষমতা যেন তৈরি হয়। টিমের মধ্যে শেয়ার করা সব ইনফরমেশন গুলো আপনার নিজের মধ্যে রাখুন। নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন যেন অন্যদের আপনার প্রতি একটি ভালো আস্থা তৈরি হয়। মোটকথা দলগতভাবে হিসাবে কাজ করলে দলের কেন্দ্রীয় রিসোর্স হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
নিজেকে শান্ত রাখা, ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া এবং বিশ্বাস :
মনে রাখবেন যারা ভালো কাজ করে তারা ছোটখাটো একটি দুটি বা কিছু ভুল করতেই পারে এবং এটা স্বাভাবিক। এই ভুল গুলোর জন্য হয়তো ক্লায়েন্ট বা টিমের সিনিয়র মেম্বারদের পক্ষ থেকে আপনি কিছু মেইল বা পার্সোনাল মেসেজ পেতে পারেন। মনে রাখবেন আপনাকে মেইল করে জানানো মানে তারা আপনার কাজে সন্তুষ্ট, তারা চাচ্ছে সে যেন ভুল ত্রুটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে তার জন্যই আপনাকে পৃথকভাবে ইমেইলটি করা। অতএব এই মেসেজের গুরুত্ব আপনাকে বুঝতে হবে। পরবর্তীতে যেন এই ভুলগুলো আর না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে কোন কাজ সাবমিশনের আগে বা আপনার পক্ষ থেকে কমপ্লিট হয়েছে জানানোর আগে অবশ্যই বারবার রিভিউ করে টিমের মধ্যে বা ক্লায়েন্টের সাথে শেয়ার করবেন।
আরো একটি বিষয়, যা ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের উপর সবসময় বিশ্বাস রাখতে হবে, সমগ্র পৃথিবীর মানুষও যদি বলে আপনি পারবেন না তবু আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি পারবেন। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আপনার মনোবল ঠিক রাখতে হবে, নিজের উপর বিশ্বাস এবং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে হবে আর এতে আপনি সহজেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।
ক্লায়েন্টের মেসেজের দ্রুত রিপ্লাই:
ক্লায়েন্ট কোন এক বিষয়ে আপনাকে নক দিয়েছে বা কাজের আপডেট সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। যথাসাধ্য চেষ্টা করুন যত দ্রুত রিপ্লাই দেওয়া যায় কারণ আপনার রিপ্লাইয়ের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনি কোন কোন সময় অনলাইনে থাকেন সেই সময় সম্পর্কে ক্লায়েন্টকে অবশ্যই অবহিত করবেন। আর যখনই এর বাইরে ক্লায়েন্ট যদি আপনাকে কোন বিষয়ে নক দেয় এবং যদি সেটা আপনার নজরে আসে তাহলে দ্রুত তাকে রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এতে ক্লায়েন্টের কাছে আপনার প্রতি নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়। অতএব ক্লায়েন্টের নিকট নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন, যেন ক্লায়েন্ট যে কোন কিছু তথ্য চাইলেই আপনি তাকে সাথে সাথে দিতে পারেন।
কাজের সীমাবদ্ধতা গুলো দূর করা:
আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কোন একটা প্রজেক্টে আপনি জড়িত হওয়ার পর যেন কোন ধরনের সীমাবদ্ধতা না থাকে। যেমন আমরা কাজ করতে গেলে প্রায়ই ইন্টারনেট বা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় এই জিনিসগুলো আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সাথে নিবেন আর ক্লায়েন্টের সাথে আগে থেকেই জানিয়ে রাখবেন বিষয়গুলো। মোটকথা আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন সব সময় চেষ্টা করবেন যেন ক্লায়েন্টকে আপনি সেখান থেকেই সাপোর্ট দিতে পারেন।
প্রাইভেসি এবং তথ্যের প্রতি গুরুত্ব:
অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, ক্লায়েন্ট হয়তো কাজের খাতিরে আপনার সাথে অনেক কিছু ইনফরমেশন শেয়ার করতে পারে এবং সেটা যেন কোন কারণেই আপনার কাছ থেকে অন্য কোথাও শেয়ার না হয়। অর্থাৎ কনফিডেনশিয়াল তথ্যের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এর পাশাপাশি নিজের প্রাইভেসির ব্যাপারেও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। হয়তো কখনো কখনো একাধিক ক্লায়েন্টের সাথে আপনার একাধারে কাজ করতে হয়, যাকে বলতে পারেন মাল্টিটাস্কিং। তখন অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে একজনের তথ্য যেন আরেকজনের কাছে চলে না যায়।
সবকিছু মেইনটেইন করে চলার ক্ষমতা:
দিন শেষে আপনি যে কাজই করুন না কেন তারপরে আপনার একটা নিজস্ব ভুবন, পরিবার বা সমাজের মধ্যে আপনাকে চলতে হয়। অতএব কাজ করতে গিয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যেন অন্য সবকিছু ভুলে না বসেন। অবশ্যই পরিবারের সাথে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে কিছুটা সময় ব্যয় করুন। এতে আপনার নতুন করে আবার কাজ করার শক্তি সঞ্চয় হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় নিজেকে ভালবাসুন, নিজের প্রতি যত্ন নিন। দিনশেষে আপনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। আর এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রেখে কাজ করার চেষ্টা করুন। আশা করি কোন না কোন একটি প্রজেক্টে আপনি দীর্ঘমেয়াদের জন্য নিযুক্ত হয়ে যাবেন বা একজন দীর্ঘমেয়াদি ক্লায়েন্ট পেয়ে যাবেন। অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো আপনার প্রতি।
পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে দয়াকরে সকল আইটি ফ্রিল্যান্সার ভাইদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। দেশের জন্য এবং দেশকে ভালোবেসে কাজ করুন। মার্কেটপ্লেসে আমাদের কাজের গুণমান ঠিক রাখতে সহযোগিতা করুন। কোনো প্রকার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন, আমি যথাসাথ্য চেষ্টা করবো আপনার প্রশ্নের উত্তর বা আপনাকে সহযোগিতা করার জন্য।