দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার মাস পর বাড়ি ফিরছি, এই প্রথম পরিবারের সদস্যদের ছাড়া বাংলাদেশের বাইরে এতদিন। আমার ছেলে দুটো যে কি খুশি, সাথে আমার জান পাখিটা, মা-বাবা সহ পরিবারের বাকি সদস্যদের কথা নাইবা বললাম। মনে উচ্ছ্বাস কাজ করছিল, স্পেন থেকে সবচেয়ে দ্রুততম সময় বাংলাদেশে যাওয়া যায় সেটা দেখে টিকিট কাটতে শুরু করলাম, দেখলাম একমাত্র তুর্কি এয়ারলাইন। প্রায় ১৩ ঘণ্টা লাগবে, সাথে সাথে টিকিটি কেটে ফেললাম।
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া থেকে আমার ফ্লাইট ছিল সকাল ১১:৫৫ মিনিটে এবং যেটা তুর্কির ইস্তানবুলে পৌঁছানোর কথা ছিল বিকাল ৪:৫০ মিনিটে। এয়ারপোর্টে চেকিং করে, বোর্ডিং পাস নিয়ে উড়োজাহাজে ঠিকঠাক মতো উঠলাম, ভিতরে প্রবেশের পরে মনে হলো কিছুটা অস্বস্তি, ভিতরে কিছুটা গরম লাগছে, ফ্লাইট ডিলে হচ্ছে। তারপর ক্যাপ্টেন অ্যানাউন্স করল কিছুটা যান্ত্রিক ত্রুটি, মানে উড়োজাহাজে এয়ারকন্ডিশনার কাজ করছে না। আমরা সবাই অপেক্ষা করতে লাগলাম, বসে থাকার পর গরমে সবাই অস্থির, এরপরও সমস্যাটির সমাধান হয় নাই, ভিতরে যে কয়েকজন শিশু বাচ্চা ছিল তাদের অবস্থা অনেকটাই অস্বস্তি থেকে অসহ্যের মতো হয়ে উঠলো।
এক পর্যায়ে ক্যাপ্টেন আবার এনাউন্স করল, আপনারা আবার চেকিং কাউন্টারে ফিরে যান, সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যাত্রা শুরু হবে না। সবাই আবার এক এক করে চেকিং কাউন্টারে এসে অপেক্ষা করতে থাকলাম, এক এক করে এক-দুই-তিন ঘণ্টা চলে গেল তারপরও সমস্যার সমাধান হয় নাই। এদিকে ইমেইল নোটিফিকেশন পেলাম আমার কানেক্টিং ফ্লাইটের সময়ও কিছুটা চেঞ্জ হয়েছে এই কারণে।
প্রায় চার ঘণ্টা পর অ্যানাউন্স হলো, আপনারা সবাই আবার চেকিং এর জন্য প্রস্তুত হন, আমরা দশ মিনিটের মধ্যেই ফ্লাই করব। সাথে সাথেই আবারো ইমেইল নোটিফিকেশন পেলাম আমার কানেক্টিং ফ্লাইট পরের দিন একই টাইমে শিফট হয়েছে। এখানে জিজ্ঞেস করতেই বলে ইস্তানবুলে ওদের তথ্য সেন্টারে যোগাযোগ করতে, সেখানেই সবকিছুর ব্যবস্থা করা হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে আমাদের উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করলো এবং তুর্কি টাইম রাত প্রায় দশটায় আমরা ইস্তানবুলে ল্যান্ড করলাম, সাথে সাথে সবাই করতালিতে সাধুবাদ জানালো ক্যাপ্টেনকে।
এরপর তুর্কিস এয়ারলাইন্সের তথ্য সেন্টারে এসে যোগাযোগ করতে ওরা আমার কানেক্টিং ফ্লাইটের টিকেট পরিবর্তন করে, বলল আমরা আপনার জন্য হোটেল এবং সবকিছুর ব্যবস্থা করেছি, শুধু আপনার তুর্কির ই-ভিসা প্রয়োজন। সাথে সাথেই তুর্কির ই-ভিসা পেয়ে গেলাম, সেখান থেকে ইমিগ্রেশন কাজ শেষ করে হোটেল ডেস্ক থেকে তুর্কিস এয়ারলাইন্সের নিজস্ব পরিবহনে হোটেলের দিকে গন্তব্য শুরু করলাম।
আমার সাথে আরও বেশ কয়েকজন ছিল একই হোটেলের যাত্রী। প্রায় এক ঘন্টার জার্নি, ইস্তানবুলের রাতের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে রাত প্রায় বারোটায় হোটেলে এসে পৌঁছালাম।তুরস্ক ভ্রমণের ইচ্ছে অনেক দিন থেকেই ছিল, কিন্তু এভাবে তুরস্কে প্রবেশ করব কল্পনাতেই ছিল না। যাইহোক, দুর্ভাগ্যের শেষেই কিছুটা স্বস্তি মিলল।
পরিশেষে, হে বাংলাদেশ, আমিও আসছি তোমার এই বন্যা দুর্যোগ মোকাবেলায় কিছুটা শামিল হতে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমি তারুণ্যের যে ঐক্যটা দেখলাম, এই সামগ্রিক দুর্ভাগ্যের শেষে যে সৌভাগ্যের প্রসূতি অপেক্ষা করছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।