ভ্রমণের পরিকল্পনা:
মালদ্বীপ ভ্রমণের পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় দেশটির ডুবে যাবার সম্ভাবনা আছে বলে অনেকে মনে করেন। এমনটা হওয়ার আগেই তাই এই অপূর্ব দেশটি নিজ চোখে দেখার ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে থেকেই এই ট্যুরের পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনা মূলত ২০২১ সালেই করা কারণ ২০২২ সালটি আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বিবাহের এক দশক পূর্ণ হলো। ‘২১ এর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুর ট্রানজিট হয়ে প্লেনের টিকেট কেটে ফেলি। কারণ তখনো বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপের সরাসরি কোনো ফ্লাইট চালু হয়নি। ইউএস বাংলা ও মালদ্বীপ এয়ারলাইনস সহ এখানে সরাসরি ফ্লাইট চালু হয় নভেম্বর ২০২১ থেকে।
ইচ্ছে ছিল লং টার্ম ট্রানজিট নিয়ে সিঙ্গাপুরসহ ঘুরে আসবো এবং যে ইচ্ছে সেই কাজ। টিকেট কাটার পর সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপের জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে রাখলাম। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের প্ল্যান দুই মাস পিছিয়ে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলে নিয়ে আসি, মনে মনে কিছুটা কষ্ট পেলেও কিন্তু এই করোনার বিরক্তিকর টেস্ট থেকে রক্ষা পেলাম। ২০১৯ এর সেই থাইল্যান্ড ভ্রমণের পর দেশের বাইরে আর যাওয়া হয়নি। তাই এই ট্যুরটা ছিল আমাদের জন্য অনেক প্রতীক্ষার।
আমাদের যাত্রা শুরু এবং প্রথম দিন:
দেখতে দেখতেই ২৭ এপ্রিল চলে এলো এবং আমাদের অপেক্ষার পালাও শেষ। ২৭ এপ্রিল ২০২২ ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ছিল রাত ১০ টা ৪০ এর দিকে। সিঙ্গাপুরের সাথে আমাদের সময়ের ব্যবধান দুই ঘণ্টা, তবে বিশেষ কারণে ফ্লাইট দেরি হয়, যার ফলে সিঙ্গাপুর পৌঁছাতে আমাদের সকাল হয়ে যায়। ঢাকা এয়ারপোর্টে ফ্লাইট দেরির সময়টুকু স্কাই-লাউঞ্জ এ ডিনার করতে করতে নিমিষেই চলে গেল।
সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট বেশ সুন্দর ও সাজানো গোছানো। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ট্রানজিট সিঙ্গাপুরে হয় জানতাম তবে এর কারণটা বুঝতে পেরেছি নিজের চোখে এয়ারপোর্ট দেখার পর। ঢাকা থেকে ফ্লাইট কিছুটা দেরি হওয়ার পর, সিঙ্গাপুর থেকে মালদ্বীপের বিমানের জন্য যে ট্রানজিট সময়টা ছিল তাও অনেকটা কমে আসে। আমরা প্রায় তিন ঘন্টার মত সময় পাই, এই ফাঁকে চাঙ্গি এয়ারপোর্ট টার্মিনাল ১ আর টার্মিনাল ৩ ঘুরে ঘুরে দেখি এবং কিছু ছবিও তুলে নেই।
মালদ্বীপে প্রথম দিন:
অবশেষে টার্মিনাল ১ থেকে সিঙ্গাপুর সময় সকাল ১০ টা ৫ মিনিটে আমাদের মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো এবং তাতে সময় লাগলো সাড়ে চার ঘণ্টার মতো। সময়ের ব্যবধানে সিঙ্গাপুর মালদ্বীপ এর চেয়ে তিন ঘণ্টা এগিয়ে, আমরা মালদ্বীপ পৌঁছাই মালে সময় দুপুর ১২ টায়। ইমিগ্রেশনে আমাদের কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। পাসপোর্ট এবং মালদ্বীপ সরকারের ইমিগ্রেশন ফর্ম দেখিয়ে আমরা চলে যেতে পেরেছি। ইতোমধ্যে মালদ্বীপে করোনাভাইরাসের জন্য বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, সেখানে করোনার বাধ্যবাধকতা নেই বললেই চলে।
ইমিগ্রেশন শেষে আমাদের আগে থেকেই বুকিং করা হোটেল ‘এইচ-৭৮’ এর কর্তৃপক্ষ স্বাগতম জানাতে অপেক্ষা করছিল। হোটেলের অফিসিয়াল গাড়িতে করে দশ মিনিটের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছে গেলাম। এই হোটেলটি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। আমরা মালদ্বীপের যে শহরে উঠলাম তার নাম হুলহুমালে। মূলত এটিও একটি দ্বীপ এবং খুব শান্ত ও স্নিগ্ধ, বলতে পারেন অনেকটা থাইল্যান্ডের ক্রাবির মত। এমনিতেই মালদ্বীপ আয়তনে ছোট একটি দেশ।
তাই এর দ্বীপগুলোও খুব ছোট ছোট। দুপুরের খাবার শেষে হোটেলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে হুলহুমালে শহরের চারপাশ কিছুটা দেখে নেই আর সৈকতে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটায়। সৈকতে সময় কাটানোর সময় একটি বিষয় খেয়াল করলাম কিছুক্ষণ পর পর সি-প্লেন চলে যায় এবং মালদ্বীপের সি-প্লেনের ব্যবহার অনেক।
একটি বিষয়, মালদ্বীপের শতভাগ নাগরিক মুসলিম। অর্থাৎ অন্য ধর্মাবলম্বীরা এখানে থাকতে পারলেও নাগরিকত্ব পায় না। অনেক বাঙালিদের সাথেও দেখা হলো, যা সবচেয়ে ভালো লাগার অনুভূতি। মনে হচ্ছিল যেন আমি বাংলাদেশেরই কোথাও আছি।
মালদ্বীপে দ্বিতীয় দিন:
দ্বিতীয় দিন আমাদের প্ল্যান ছিল মালে সিটি ঘুরে দেখা। হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে জেনে নিলাম কীভাবে যেতে হবে। মালদ্বীপে একটি বিষয় খেয়াল করলাম যেসব ট্যাক্সিতে যাত্রী আছে সেগুলোর মাথায় লাল বাতি আর যেগুলোতে সিট খালি আছে তাতে সবুজ বাতি জ্বলে। ফলে সহজেই বোঝা যায় কোন ট্যাক্সিতে উঠা যাবে।
আমরা মালে সিটি গিয়ে এর দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখলাম। মালে থেকে হুলহুমালের সাথে সংযোগকারী যে ব্রিজ রয়েছে তার রাতের সৌন্দর্য মনমুগ্ধকর। হুলহুমালের তুলনায় মালে সিটি কোলাহলপূর্ণ। আমরা রাত ১০ টায় হোটেলে ফিরে আসি। হুলহুমালে থেকে মালে সিটির ট্যাক্সি ভাড়া ৭৫ মালদ্বীপীয় রূপী, যা মালদ্বীপ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। তাই এর অতিরিক্ত ভাড়া চাইলে তা বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মালদ্বীপে তৃতীয় দিন এবং স্বপ্নের আইল্যান্ড যাত্রা:
এবার আমাদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত প্রাইভেট আইল্যান্ডে যাবার পালা। আমরা যে আইল্যান্ডে গিয়েছিলাম তার নাম ফিহালহুহি। এটি হুলহুমালে থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী। আমাদের হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে ফিহালহুহি প্রাইভেট আইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ কথা বলে নিলো। ব্রেকফাস্ট শেষে সকাল সাড়ে ৮ টায় আমরা হোটেল থেকে চেকআউট করে বের হলাম।
এয়ারপোর্টে ই-জোন নামে একটি স্থান রয়েছে যা মূলত বিভিন্ন রিসোর্টের তথ্যকেন্দ্র। আমরা সেখান থেকে ফিহালহুহি হোটেল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিলাম। সকাল ৯ টা নাগাদ মালে এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের স্পিডবোট ছাড়লো, স্পিডবোট যাচ্ছে ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আর মনে মনে ইন্দোনেশিয়ার নুসা পেনিদা ভ্রমণের কথা মনে পড়ছিল, যদিও নুসা পেনিদা ভ্রমণের সময় যে ঢেউ ছিল সেই রকম কোন ঢেউ অনুভূত হয়নি।
আমাদের সাথে স্পিড বোর্ড এর অন্য যে দুজন যাত্রী ছিল তারা ছিল সুইজারল্যান্ড থেকে আসা বয়স্ক দম্পতি। প্রায় ৪০ মিনিট লাগলো ফিহালহুহি প্রাইভেট আইল্যান্ডে পৌঁছাতে, তবে এই সময়টি ছিল খুবই মনমুগ্ধকর, ৪০ মিনিট যেন মুহূর্তের মধ্যেই চলে গেল চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে। বিভিন্ন স্থানে পানির বিচিত্র রঙ, যে স্থানে পানির রঙ সবুজ দেখায় সেখানে আসলে পানির তলদেশে দ্বীপ অবস্থিত। বিষয়টি দুশ্চিন্তার কারণ কেননা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিনদিন বেড়েই চলেছে আর বর্তমান উচ্চতা থেকে আরও ৬/৭ ফুট বেড়ে গেলে পুরো মালদ্বীপ ডুবে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফিহালহুহি আইল্যান্ডে আমাদের প্রথম দিন: সকাল ১০ টায় আমরা কটেজে প্রবেশ করি। কটেজ বেশ সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও খোলামেলা, মনে হল যেন কোন এক স্বর্গীয় গ্রামে এসে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়ে সুন্দর এই দ্বীপটি এক্সপ্লোর করার জন্য এবং বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য। ছোট্ট ডিম্বাকৃতির আইল্যান্ডটি এতো ছোট যে তা দশ মিনিটেই হেঁটে একবার প্রদক্ষিণ করা যায়। তবুও এর চারপাশের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ফিহালহুহি আইল্যান্ড আমার চোখে পৃথিবীর বুকে এক টুকরো স্বর্গ। অবশ্য মালদ্বীপের অন্য সব প্রাইভেট আইল্যান্ডই সুন্দর, এটিও তার মধ্যে অন্যতম।
আর স্বচ্ছ নিলাময় জলরাশি দেখে বারবার আমার LUCA মুভিটির কথাই শুধু মনে পড়ছিল সৈকতে নামার পর। সাদা বালুময় তলদেশ পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে, এ যেন এক মায়াবী মুহূর্ত!
এই আইল্যান্ডে ৮০ টি কটেজে মোট প্রায় ২০০ জন মানুষ থাকতে পারে। আর রিসোর্টে কর্মরত কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৮০ জন, যারা পর্যটকদের সেবা দানের কাজে নিয়োজিত। এখানেও অনেক বাংলাদেশী রয়েছে। জানতে পারলাম ৭০ থেকে ৭৫ জন কর্মী রয়েছে যারা বাংলাদেশী। তাদের অনেকের সাথে আমার ব্যক্তিগতভাবে কথাও হয়েছে।
ফিহালহুহি আইল্যান্ডে আমাদের দ্বিতীয় দিন:
সকালের ব্রেকফাস্ট শেষে আবারও দ্বীপটি ঘুরে ঘুরে দেখছি, হঠাৎ একজন বাংলাদেশী কর্মী পেয়েছিলাম যিনি আইল্যান্ডের নারিকেল গাছের পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত। তিনি আমাদের দুইদিন নারিকেল খাওয়ালেন। বিদেশে গিয়ে নিজ দেশের মানুষের আপ্যায়ন পেয়ে ভীষণ ভালো লাগলো আমাদের। আরেকটি বিষয় খেয়াল করলাম সেও আমাদের সাথে কথা বলে অনেকটা আনন্দিত একেই বুঝি বলে দেশের প্রতি টান এবং দেশাত্মবোধ।
আরও মজার ব্যপার হলো তিনি এই আইল্যান্ড এর বিভিন্ন জাতের আমাকে চারটি নারিকেল চারা দিলেন দেশে নিয়ে আসার জন্য। তার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তবে একটি বিষয় বলতেই হয়, প্রাইভেট আইল্যান্ডে সবকিছুই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। যেমন একটি টুথব্রাশের মূল্য প্রায় ৪ ডলার। আইল্যান্ডের কিছু চিত্র আমি ভিডিওতে দেখানোর চেষ্টা করব যা দেখে আপনারা এর সৌন্দর্য সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পাবেন।
তবে একটি বিষয় বলার অপেক্ষা রাখেনা যে মালদ্বীপের এই পর্যন্ত যে সৌন্দর্য উপভোগ করলাম তা সত্যিই মনমুগ্ধকর এবং তবে ছবিতে আমরা মালদ্বীপকে যেরকম দেখি বাস্তবে মালদ্বীপ এরচেয়েও বেশি অনেক সুন্দর।
হোটেলে আমাদের সকাল ও রাতের খাবার অন্তর্ভুক্ত ছিল আর আইল্যান্ডের ভিতর একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেয়েছি। এই রেষ্টুরেন্টের মধ্যেও একজন বাঙালি ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়, যিনি আমাদের অনেক খাতির-যত্ন করেছিলেন। আমাদের প্রাইভেট আইল্যান্ডের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে যে সময়ের মধ্যে অবশ্যই খেয়ে নিতে হবে। সকালের নাস্তার সময় সকাল ৭ টা থেকে ৯ টা, দুপুরের খাবারের সময় দুপুর ১২ টা থেকে ২ টা আর রাতের খাবারের সময় সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ৯ টা। সম্ভবত অন্যান্য রিসোর্টেও একই নিয়ম। আইল্যান্ডের দ্বিতীয় দিনে আমরা সমুদ্রের কাছে অনেক সময় কাটালাম।
পানির উপর দোলনা সহ আরও নানা স্থান আছে ছবি তোলার জন্য। আমরা দেশ থেকেই কিছু টি-শার্ট, প্ল্যাকার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম আমাদের দশম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে। মালদ্বীপের বুকে এক টুকরো স্বর্গে আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকীর কিছু মুহূর্ত যা স্মৃতি হয়ে থাকবে বাকি জীবন।
মালদ্বীপে পঞ্চম দিন, আর ফিহালহুহি আইল্যান্ডে আমাদের তৃতীয় দিন:
আইল্যান্ডে তৃতীয় ও শেষ দিনও কাটালাম অত্যন্ত আনন্দে। আমাদের পাশের কটেজে যারা উঠেছিল তারা আমাদের প্রতিবেশীর মতো হয়ে গিয়েছিল। আমাদের এক পাশের কটেজে এসেছে ক্রোয়েশিয়ার তিনজন মেয়ে যাদের দুজন ডাক্তার ও অন্যজন আইনজীবী। আরেক কটেজে জার্মানি থেকে আসা এক বয়স্ক দম্পতি। তাদের সাথেও অনেক সময় কাটালাম, গল্প করলাম।
একে অপরের দেশের সংস্কৃতি নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম। এছাড়াও স্পীডবোটে আসার সময় সুইজারল্যান্ড থেকে আসা এক দম্পতির সাথে আমাদের পরিচয় হয় যারা ১৪ দিনের জন্য এসেছে এই আইল্যান্ডে। তাও এটি তাদের পঞ্চম বারের মতো মালদ্বীপ ভ্রমণ। সুতরাং মালদ্বীপ তাদের এতোটা পছন্দের।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসলেও আমাদের আইল্যান্ডে জার্মান পর্যটক ছিল সবচেয়ে বেশি। আজকে ঈদের দিন হওয়াতে আইল্যান্ডের বিভিন্নস্থান, বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট এবং কয়েকটি স্থানে সুন্দর ডেকোরেশন ছিল সেই জিনিস গুলো উপভোগ করলাম, ঈদ উপলক্ষে রাতে বুফে ডিনার ছিল খুবই চমৎকার।
রাতের খাবার শেষে দ্বীপটি ঘুরে ঘুরে দেখছি আর বারবার মনে পড়ছে আগামীকাল সকালেই ছেড়ে চলে যেতে হবে এই দ্বীপটি। সত্যি বলতে কি এই দ্বীপটির সৌন্দর্যে প্রেমে পড়ে যায় এবং কেন যেন মনে হচ্ছিল বিধাতা হয়তো আমার ভাল কোন কাজের প্রতিদান হিসেবে আমাকে এই দ্বীপটিতে কয়েকটি রাত কাটানোর জন্য পুরস্কৃত করলেন। ঈশ্বরের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা এই পৃথিবীর বুকে আমাকে এক স্বর্গীয় অনুভূতি দেয়ার জন্য।
ফিহালহুহি আইল্যান্ড থেকে সিঙ্গাপুর যাত্রা:
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট সেরে চেকআউটের জন্য রেডি হয়ে যায়। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই টেক আউট করে আমরা রেডি এবং সকাল ঠিক নয়টায় ফিহালহুহি আইল্যান্ড থেকে আবারও স্পিডবোট দিয়ে আমরা এয়ারপোর্টে ফিরে আসলাম। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। সিঙ্গাপুরের ট্রানজিট ছিল ২৩ ঘন্টার। এই সময়েই সিঙ্গাপুর ভ্রমণের প্ল্যান করে এসেছিলাম আমরা। সিঙ্গাপুর ভ্রমণ এর ডাইরি নিয়ে আরো একটি ব্লক লিখব অপেক্ষায় থাকুন!
মালদ্বীপ ভ্রমণ এর এই পাঁচ দিনে আমাদের দুজনের টোটাল খরচাপাতি, খরচ হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকার মতো:
প্লেন ফেয়ার: ৭৫ হাজার (ঢাকা-সিঙ্গাপুর-মালদ্বীপ-সিঙ্গাপুর-ঢাকা, সিঙ্গাপুরএয়ারলাইন্স)
হুলহুমালে দুই রাতের হোটেল খরচ: প্রায় ২০ হাজার টাকা, ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফিহালহুহি প্রাইভেট আইল্যান্ড: যাওয়া-আসার স্পীডবোট ভাড়া প্রায় ২৬ হাজার টাকা বা ৩০০ ডলার।
ফিহালহুহি প্রাইভেট আইল্যান্ড: আমাদের তিন রাতের জন্য খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্রেকফাস্ট এবং ডিনার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বাদবাকী খরচ: খাবার + অন্যান্য।
নোট: মালদ্বীপ ভ্রমণ এর সবচেয়ে পিক সিজন হলো নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। আর আমরা কিছুটা অফ সিজনে যাওয়াতে খরচ কিছুটা কম হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা আমরা অনেক আগে থেকেই প্লেন এবং হোটেলের টিকেট কাটায় কিছু ডিসকাউন্ট পেয়েছিলাম। তাই আপনারা যদি কেউ প্ল্যান করেন তার সাথে খরচের তারতম্য হতেও পারে।
পরিশেষে, দয়াকরে সব জায়গায় ভদ্রতা বজায় রাখুন আর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল জিনিস এখানে সেখানে ফেলবেন না। প্রকৃতি পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আপনার আমার সকলের। মনে রাখবেন ধনী-গরীব যেই হোক না কেন প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।
One thought on “স্বপ্নময় মালদ্বীপে স্বর্গময় কয়েকটি দিন!”