স্পেনে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় এবং এতে চাকরিদাতার সহায়তা, প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং সরকারি অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। চলুন ধাপে ধাপে বিস্তারিত দেখি:
১. একটি চাকরির অফার বা স্পন্সরশিপ সংগ্রহ
- কেন চাকরির অফার গুরুত্বপূর্ণ: স্পেনে কাজ করার জন্য প্রথমেই একটি স্প্যানিশ কোম্পানির কাছ থেকে চাকরির অফার প্রয়োজন। স্পেনের ইমিগ্রেশন নিয়ম অনুযায়ী, শুধুমাত্র স্পেন সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকর্তা বিদেশী কর্মী নিয়োগ করতে পারে।
- কোথায় চাকরি খুঁজবেন: নির্দিষ্ট কিছু জব পোর্টাল এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো সুযোগ খুঁজে পাওয়া যায়:
- LinkedIn Jobs – এখানে চাকরিদাতাদের সাথে যোগাযোগ করা এবং চাকরির সুযোগ খুঁজে পাওয়া সহজ।
- InfoJobs – এটি স্পেনের একটি অন্যতম জনপ্রিয় চাকরির পোর্টাল।
- Indeed Spain – এই পোর্টালে কোম্পানিগুলির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলি পাওয়া যায়।
- চাকরির ধরন: বিভিন্ন সেক্টরে চাকরির সুযোগ আছে যেমন IT, স্বাস্থ্যসেবা, ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে।
২. চাকরিদাতার মাধ্যমে কাজের অনুমোদন (Authorisation of Residency and Work Permit)
- চাকরিদাতার আবেদনের প্রয়োজনীয়তা: স্পেনের নিয়ম অনুযায়ী, কোম্পানিকে প্রথমে স্থানীয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের মধ্যে প্রার্থীদের খোঁজ করতে হয়। যোগ্য প্রার্থী না পেলে তারা বিদেশ থেকে কর্মী আনার অনুমতি পায়।
- ইমিগ্রেশন আবেদন: চাকরিদাতা কোম্পানি স্পেনের ইমিগ্রেশন অফিসে আপনার জন্য রেসিডেন্সি ও ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন জমা দিবে। এটি করার জন্য তাদের আপনার চাকরি সম্পর্কিত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র দিতে হবে।
- আবেদনের অনুমোদন: ইমিগ্রেশন অফিস আপনার আবেদন পর্যালোচনা করে অনুমোদন প্রদান করলে আপনি স্পেনে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৩. বাংলাদেশে স্পেনের দূতাবাসে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন
- আবেদন জমা দেওয়া: স্পেনের ইমিগ্রেশন থেকে কাজের অনুমোদন পাওয়ার পরে, বাংলাদেশে স্পেন দূতাবাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
- প্রয়োজনীয় নথি:
- চাকরির অফার লেটার ও কাজের অনুমোদন নথি: এটি স্পেনের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনপত্র যা কোম্পানি সরবরাহ করবে।
- পাসপোর্ট: আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
- মেডিক্যাল সার্টিফিকেট: স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করে একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: আপনি যাতে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকেন, সেজন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
- ভিসা ফি: দূতাবাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি জমা দিতে হবে।
- ইন্টারভিউ: প্রয়োজন হলে স্পেন দূতাবাসে একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হতে পারে, যেখানে আপনার কাজ ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
৪. ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত এবং অপেক্ষা সময়
- অপেক্ষা এবং সিদ্ধান্ত: ভিসা আবেদন পর্যালোচনা করতে সাধারণত ২-৩ মাস সময় লাগে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আপনার আবেদন মূল্যায়ন শেষে অনুমোদন প্রদান করবে।
- পজিটিভ সিদ্ধান্ত: আবেদন অনুমোদিত হলে স্পেন দূতাবাস আপনাকে ভিসা ইস্যু করবে এবং আপনি স্পেনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
৫. স্পেনে পৌঁছানোর পর কাজের অনুমোদন কার্যকর করা
- ইমিগ্রেশন অফিসে রিপোর্টিং: স্পেনে পৌঁছানোর পর আপনাকে স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে নিজেকে রেজিস্টার করতে হবে।
- NIE কার্ড (Foreigner Identity Number): এটি স্পেনে আপনার আইডেন্টিটি এবং ট্যাক্স রেকর্ডের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি ছাড়া আপনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবেন না।
- বাসস্থান ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা: স্থায়ীভাবে থাকার জন্য বাসস্থান খোঁজা এবং আপনার বেতন পেতে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা প্রয়োজন।
অতিরিক্ত কিছু টিপস:
- স্পেনিশ ভাষা শেখা: স্পেনের বেশিরভাগ অফিস এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহার হয়, তাই ভাষার কিছুটা ধারণা থাকলে কাজ সহজ হবে।
- সংযোগ তৈরি করুন: স্পেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে সংযোগ স্থাপন করলে নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়া সহজ হবে।
স্পেনে কাজের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ, তবে ধৈর্য ধরে সঠিকভাবে সবকিছু সম্পন্ন করলে সফলভাবে আপনি স্পেনে কাজের অনুমতি পেতে পারেন।
আরো বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
পরিশেষে, কোন প্রকার প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব উত্তর দেওয়ার। যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে দয়াকরে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
স্পেনে কাজের ভিসার বাংলাদেশের পেশাজীবীদের জন্য সম্পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়া এবং নির্দেশনা!