আইটি ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে জড়িত প্রায় এক যুগেরও বেশি, ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছি একটি আমেরিকান প্রোজেক্টে ফুল-টাইম হিসাবে। ২০২০ এর দিকে বিশ্বব্যাপী যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন অনেক অফিসে ওয়ার্ক হোম রুলস জারি করে, পরে অনেকেই বাসা থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমি আমেরিকান যে কোম্পানিতে কাজ করছি তাদের অনেকগুলো শাখা অফিস রয়েছে ইউরোপের বাজারে।
করোনার সময় আমার একজন প্রজেক্ট ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের তো ইউরোপের বাজারে অনেকগুলো শাখা অফিসে রয়েছে আমি কি সেখান থেকে কাজ করে যেতে পারি না? অতঃপর আমার ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরের অনুমতি পেলাম আমি বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে এ কাজ করতে পারবো। এমনিতেও আমি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানোর খুব ইচ্ছে আর ইউরোপকে বেছে নেয়া এই জন্যই যেন খুব সহজেই পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ ঘুরতে পারি।
যে কথা সেই কাজ শুরু হয়ে গেল আমার কিছুটা ঘাটাঘাটি, কিভাবে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো যায় এবং সেই সাথে কাজও চালিয়ে নেয়া যায়। তারই সুবাদে অনেক রিসার্চ করে গত সেপ্টেম্বরে একবার ইউরোপ ভ্রমণ করি অফিসিয়ালি। প্রচন্ড ঠান্ডা বা শীত প্রধান দেশকে আমি খুব একটা পছন্দ করি না,তাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্পেন যাওয়ার, সেই হিসেবে দেখলাম স্পেন কিছুটা সহজ প্রসেস।
বাংলাদেশে এম্বেসী আছে বলে কিন্তু তাদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল, সকল ডকুমেন্টেশন কালেকশন এবং ভেরিফিকেশন করতেই তিন মাসের মত লেগে যায়। অতঃপর স্পেনে এসে অফিসিয়ালি এপ্লাই করার ২২ কর্ম দিবসের মধ্যে আমার সেই কাঙ্খিত স্পেনের রেসিডেন্সি এবং ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে যায়।
যা আমার একটি ইচ্ছা এবং স্বপ্ন পূরণের মতো ব্যাপার, মায়াবী এই পৃথিবীর সৌন্দর্য নিজ চোখে ঘুরে ঘুরে দেখার। সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে আমিই প্রথম এবং একমাত্র আইটি ফ্রিল্যান্সার এখন পর্যন্ত, একজন ডিজিটাল নোমাড হিসেবে স্পেনের ওয়ার্ক পারমিট এবং রেসিডেন্ট পারমিট পাওয়া। সবকিছুর জন্য শুকরিয়া, অসংখ্য ধন্যবাদ আমার বর্তমান কর্মস্থলকে আমাকে এমন একটি সুযোগ করে দেয়ার।
এই লিংকে গিয়ে জেনে নিন স্পেনের ডিজিটাল নোমাড ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো:
আমার ইচ্ছে পূরণের সংবাদটি প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণেও প্রকাশিত হয়েছে চাইলে এখান থেকেও বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন। পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে দয়াকরে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
স্পেনের ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য বাংলাদেশ থেকে আবেদন করতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. স্পন্সরশিপ বা চাকরির অফার খোঁজা:
• স্পেনে কাজ করার জন্য প্রথমে একটি স্প্যানিশ কোম্পানির কাছ থেকে চাকরির অফার বা স্পন্সরশিপ থাকতে হবে।
• কিছু জনপ্রিয় জব পোর্টাল যেখানে স্পেনের চাকরির অফার পাওয়া যেতে পারে:
• InfoJobs
• LinkedIn Jobs
• Indeed Spain
২. চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন (Authorisation of Residency and Work Permit)
• যদি স্প্যানিশ কোম্পানি আপনাকে নিয়োগ দিতে চায়, তাহলে তারা আপনার জন্য কাজের অনুমোদন (Authorisation of Residency and Work Permit) পেতে সরকারের কাছে আবেদন করবে।
• স্প্যানিশ ইমিগ্রেশন অথরিটি সেই আবেদন মূল্যায়ন করবে এবং অনুমোদন দিলে আপনি ভিসা আবেদন করতে পারবেন।
৩. ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন জমা দেওয়া:
• কাজের অনুমোদন পাওয়ার পর, আপনাকে ঢাকাস্থ স্প্যানিশ দূতাবাসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন জমা দিতে হবে।
• প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের মধ্যে রয়েছে:
• চাকরির অফার লেটার এবং অনুমোদন নথি
• আপনার পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ)
• মেডিক্যাল সার্টিফিকেট
• পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
• ভিসা ফি প্রদান
৪. ভিসা ইন্টারভিউ এবং সিদ্ধান্ত:
• দূতাবাসে প্রয়োজন হলে ভিসা ইন্টারভিউ দিতে হতে পারে।
• ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ২-৩ মাসের মতো সময় নিতে পারে, তাই ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
৫. স্পেনে পৌঁছানোর পর কাজের অনুমোদন কার্যকর করা:
• স্পেনে পৌঁছানোর পর, স্থানীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে আপনার কাজের অনুমোদন কার্যকর করতে হবে এবং NIE (Foreigner Identity Number) কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
স্পেনের ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হলেও সঠিকভাবে ডকুমেন্টস প্রস্তুত করলে এবং চাকরিদাতার সমর্থন থাকলে আপনি সফলভাবে আবেদন করতে পারবেন।