অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম পরিবারের সাথে পদ্মার পাড়ে এবং আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু সরেজমিনে একটু ঘুরে দেখার। যেদিন পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যান বসানো হয় সেদিনই মনের মধ্যে এক অসম্ভব ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে এবং আমরা সবাই জানি, দক্ষিণাঞ্চলের সাথে এক অভূতপূর্ব যোগাযোগ প্রতিস্থাপন হবে এর মাধ্যমে। কয়দিন আগে থেকেই মনে মনে প্ল্যান করে রেখেছিলাম এই সপ্তাহের ছুটির দিনে পদ্মার পাড়ে ইলিশ ভাজা এবং স্বপ্নের পদ্মা সেতু গড়ে উঠার মুহূর্ত নিজের চোখে দেখা। যাকে বলা যায় রথদেখা এবং এর সাথে কলাও বেচা হাহাহাহা।
সকালের নাস্তা করে এগারোটা নাগাদ যাত্রা শুরু করলাম। ঢাকা থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে খুব সহজেই পদ্মার পাড়ের মাওয়া ঘাটে যাওয়া যায়। যাত্রাপথে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হওয়ার পর, এক নয়ন ভিরাম দৃশ্য চোখের মাঝে ভেসে উঠল। মনে হলো আমি যেন বিদেশের কোন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, মুহূর্তের মধ্যেই মনে পড়ে গেল আমার থাইল্যান্ড ট্যুরের ব্যাংকক থেকে পাতায়া ভ্রমণ এর স্মৃতি। সত্যিই আমি আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যত রাস্তা দিয়ে চলেছি এই রাস্তাটির নকশা অনেকটাই ব্যাংকক থেকে পাতায়া যাওয়ার মতো। রাস্তার সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে হঠাৎ করে গাড়ির স্পিড মিটার এর দিকে চোখ গেল, ড্রাইভার ভাই দেখি গাড়ি ১০০/১১০ কখনো কখনো ১১৫কিলোমিটার বেগে ছুটে চলছে। সত্যিই অবাক করার বিষয় বাংলাদেশের কোন রাস্তা দিয়ে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি বেগে চলে যাচ্ছি।
দেখতে দেখতে ঢাকা-মতিঝিল থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত সময়, আমরা পৌছে গেলাম পদ্মার পাড়ের মাওয়া ঘাটে। গাড়ি থেকে নেমে পদ্মার পাড়ে গিয়ে ট্রলার নিয়েই চলে গেলাম পদ্মা সেতুর কাছাকাছি এবং সেখান থেকেই চলে গেলাম একটু দূরে পদ্মা নদীর বুক ভেদ করে ভেসে ওঠা এক টুকরো স্বপ্নময় চর, যাকে বলতে পারেন মিনি কক্সবাজার। ট্রলার থেকে নেমে চরের মাঝে কিছুক্ষণ সময় কাটালাম এবং কিছু স্মৃতি ফটোফ্রেমে স্মৃতিময় করে রাখলাম। সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয়টি, আমাদের দুই ছেলের কিছু সময় মুক্তবাতাসে ছোটাছুটি এবং বিভিন্ন খেলায় মেতে ওঠা।
পুনরায় ফিরে ওপার থেকে এপার আসলাম এবং রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানে নিজের হাতে ইলিশ বাছাই করে ইলিশ ভাজা সাথে বেগুন ভাঁজি আর বিভিন্ন পদের ভর্তা দিয়ে ভরপেট খেয়ে নিলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ বসে তারপর আবার ফিরে আসার জন্য গাড়িতে গিয়ে বসলাম এবং আবারো রাস্তার সৌন্দর্য দেখতে দেখতে মনে হলো মুহুর্তের মাঝেই বাসায় ফিরে আসলাম। তবে এখানে একটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন, রাস্তাটি অনেক সুন্দর এবং যানজট বিহীন হওয়ায় অনেকেই গাড়ি নিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলে। আমাদের অবশ্যই সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে এবং এই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে কারণ মানুষের জীবনের মূল্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
নোট: দয়াকরে সব জায়গায় ভদ্রতা বজায় রাখুন আর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল জিনিস এখানে সেখানে ফেলবেন না। প্রকৃতি পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আপনার আমার সকলের। মনে রাখবেন ধনী-গরীব যেই হোক না কেন প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।
Greate