বালি ভ্রমণের গল্প:
বালি যাওয়ার প্ল্যান করার আগে দর্শনীয় স্থানগুলো ইন্টারনেট ঘেটে দেখার চেষ্টা করি এবং দেখি অনেক সুন্দর সুন্দর স্পট রয়েছে এবং বুঝতে পারলাম বালিতে তিন-চার দিনের জন্য গেলে তেমন কিছুই দেখতে পাবো না, তাই ৯-১০ দিনের জন্য প্ল্যান করি আমরা তিনজন(আমি, আমার অর্ধাঙ্গী এবং আমাদের চার বছরের ছেলে)
প্লেনের টিকিট:
ঢাকা থেকে বালি যাওয়ার সরাসরি কোন ফ্লাইট নেই। তাই আপনাকে মালশিয়ায় বা সিঙ্গাপুর ট্রানজিট সহ ফ্লাইট নিতে হবে। আপনার বাজেট অনুযায়ী প্লেনের টিকিট কেটে নিতে পারেন। তবে টিকিট এর দাম কমবেশি নির্ভর করে কত আগে বুকিং করবেন আর ট্রানজিট এর সময় এর উপরে। আমি ১৮ দিন আগে মালিন্দ এয়ারলাইন্স এর ওয়েবসাইট থেকে আমার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টিকিট কাটি। ট্রানজিট টাইম যাওয়ার সময় ২.৩০ ঘন্টা এবং আসার সময় ৬.৩০ ঘন্টা ছিল। আমাদের তিন জনের প্লেনের আসা-যাওয়ার টিকিট খরচ ছিল প্রায়: ১ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা। ঈদের আগে চাহিদা বেশি থাকায় প্লেনের টিকিট খরচ একটু বেশিই ছিল।
হোটেল বুকিং:
আমি বাংলাদেশ থেকেই হোটেল বুক করে গিয়েছি, agoda.com থেকে বুকিং দিলে আপনার আগেই পেমেন্ট দিতে হয় না। হোটেল উঠার ২-৩ দিন আগে তারা চার্জ কেটে নিবে, তবে চার্জ কাটার নির্দিষ্ট তারিখের দিনে কার্ড এ ব্যালান্স থাকতে হবে। আমি আমার পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড কার্ড দিয়ে হোটেল বুক দিয়েছিলাম। ২৫০০-৩০০০ টাকায় ভালো হোটেল পাওয়া যায় ব্রেকফাস্ট সহ। আমি টোটাল ৮ রাতের জন্য তিন হোটেল বুক দেই। প্রথম তিন রাত কুটাতে, একরাত উবুদ এবং শেষ চার রাত লেগিয়ান এ। তিন হোটেল মিলিয়ে ব্রেকফাস্টসহ আমাদের খরচ ছিল: ২০ হাজার টাকা।
বালিতে ইন্টারনাল ট্রান্সপোর্ট :
প্লেন এবং হোটেল বুকিং শেষে ভাবতে থাকি বালিতে যাওয়ার পর কিভাবে ঘুরে বেড়াবো। তাই ইন্টারনাল ট্রান্সপোর্টের জন্য কি করতে হবে একটু ইন্টারনেট ঘেটে দেখি। হঠাৎ যাওয়ার দুইদিন আগে আমাকে বালির স্থানীয় একজন ফেইসবুক মেসেন্জারে মেসেজ দিলো যার বাংলা সারমর্ম “স্যার আপনি কি এই মাসে বালি আসছেন?” আমি বললাম হা, তারপর সে বললো আমি আপনার জন্য কার সার্ভিসের ব্যবস্থা করে দিবো, যদি আপনি রাজি থাকেন। কথা বলতে বলতে ভালোই লাগলো। আমি টোটাল কয়দিন বালিতে থাকবো, কোন কোন জায়গায় যেতে চাই সে জানতে চাইলো, সে অনুযায়ী একটি আইটিনারির লিস্ট করবে। তার পাঠানো আইটিনারি ভালোই লাগলো এবং কত খরচ নিবে জানতে চাইলাম(যদিও আমার একটা ধারণা হলো ইন্টারনেট ঘেটে), শেষ পর্যন্ত ৪০০ ডলারে তার সাথে চুক্তি হয়, আমাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করবে, একজন ইংরেজি জানা ড্রাইভার দিবে, আইটিনারির লিস্ট অনুযায়ী বালি ভ্রমণ করবো, নুস পেনিদা ভ্রমণের সকল খরচ সে দিবে, একটি ভালো মানের গাড়ি দিবে, শেষদিন আবার এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিবে এবং পেমেন্ট নিবে। তাছাড়া আপনি চাইলে বালিতে অনেক ট্যাক্সি ও মোটর বাইক সার্ভিসও আছে, হোটেল কর্তৃপক্ষকে বললে তারাও গাড়ি ঠিক করে দেয়।
প্রথম দিন :
ঢাকা থেকে আমাদের ফ্লাইট ছিল(18th August 2018) রাত ১.১০ মিনিটে, ঈদের আগে রাস্তায় অনেক জ্যাম থাকতে পারে এইভেবে রাত ৮ টার মধ্যে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেই এবং ১০ টার কাছাকাছি সময়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে যাই। পৌঁছেই বোডিং পাসের জন্য লাইনে দাঁড়ায়, বেশি ভিড় না থাকায় খুব কম সময়েই বোর্ডিং পাস পেয়ে যাই। বোর্ডিং শেষে ইমিগ্র্যাশন ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করে ইমিগ্র্যাশন লাইনে দাঁড়ায়। ইমিগ্র্যাশন অফিসার পাসপোর্ট, বোডিং পাস দেখে তার বড় অফিসারের কাছে পাঠালো। বড় অফিসার আমাকে দেখে বললো কি হয়েছে আমি বললাম ওই কাউন্টার থেকে আপনার কাছে আসতে বললো, সে পাসপোর্ট দেখে নিয়ে বললো আমার সাথে আসেন এবং গিয়ে সেই অফিসারকে ছোট খাটো একটা ধমক দিয়ে বললো, পাসপোর্টে নাম এবং তাদের সবকিছু ঠিক আছে তারপরও আমার কাছে পাঠালেন কেন? সে বললো স্যার ফার্স্ট টাইম ইন্দোনেশিয়া যাচ্ছে তাই। বড় অফিসার বললো তো কি হয়েছে, সবকিছু তো ঠিক আছে। এরপর বড় অফিসার বললো আপনারা আসেন আমি করে দিচ্ছি। ইমিগ্র্যাশন এর কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে আমি কি করি, আমার স্ত্রী কি করে জানতে চাইলো এবং জেনে খুবই খুশি হলো আর একে একে আমাদের ইমিগ্র্যাশনও শেষ হলো।
সবকিছু শেষ এইবার ফ্লাইটের জন্য রেডি কিন্তু এখনো প্রায় ২ ঘন্টার উপর সময় আছে, কি করা যাই ভেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড স্কাই লাউঞ্জে গিয়ে ডিনার সেরে নিলাম এবং সময়ও ভালো কাটলো। রাত ১২ টার একটু পর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড স্কাই লাউঞ্জে থেকে বের হয়ে ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি এবং ১ টার মধ্যে প্লেনে উঠি। রাত ১.২৫ মিনিটে প্লেন ফ্লাই করে, ৩.৫ ঘন্টার জার্নি এবং মালয়েশিয়া আমাদের থেকে ২ ঘণ্টা এগিয়ে তাই প্লেন ল্যান্ড করার সময় দেখি প্রায় সকাল ৭ টা। বাজেট প্রব্লেম না হলে মালিন্দ এয়ার আমার কাছে ভাল মনে হয়েছে এবং তাদের খাবারও ভালো।
মালয়েশিয়া ট্রানজিট:
উপর থেকে মালয়েশিয়াকে খুবই সজ্জিত মনে হলো। মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে নেমেই অনেক ভালো লাগলো খুবই বড় এয়ারপোর্ট। একপ্রান্তে প্লেন ল্যান্ড করার পর অপর প্রান্ত থেকে বালির ফ্লাইট। একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে আপনাকে ২-৩ মিনিটের জন্য ট্রেনে উঠতে হবে। আমাদের ট্রানজিট সময় ২.৩০ ঘন্টা তাই খুব দ্রুত অপর প্রান্তে গিয়ে চেক ইন করে নেই এবং সকাল ৯.১৫ মিনিটে বালি ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করি।
মালয়েশিয়া টু বালি ফ্লাইট:
মালয়েশিয়ায় প্লেনে চেক ইন করার ক্ষেত্রে একটা জিনিস খুবই ভালো লাগলো, তারা “চিলড্রেন উইথ ফ্যামিলি” কে সবার আগে বিমানে উঠতে দেয়। প্লেন ছাড়তে ৩০ মিনিটের মতো লেট হলো এবং মালয়েশিয়া সময় সকাল ৯.৪৫ মিনিটে প্লেন ফ্লাই করে। এখন আবার ৩ ঘন্টার ফ্লাইট, বালির জন্য অপেক্ষা যেন শেষ হয় না। অপেক্ষা করতে করতে একসময় প্লেন ল্যান্ডিং এর এনাউন্স হলো কিন্তু ল্যান্ড করছে না, একবার প্লেন একটু উপরে উঠে তো কিছুক্ষন পর আবার নিচে নামে, নিচে বা চার-পাশে ভারত মহাসাগর ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না, চারিদিকে শুধু নীলময় জলরাশি।। মনে মনে একটু ভয়ও হচ্ছিলো। হঠাৎ দেখতে পেলাম দ্বীপের মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে এবং প্লেনও এগিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারলাম, আবহাওয়া কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় প্লেন ল্যান্ড করতে ৩০ মিনিটের মতো দেরি হলো, যাইহোক অবশেষে নিরাপদে প্লেন Ngurah Rai International Airport (Denpasar) এ ল্যান্ড করলো।
প্লেন থেকে নেমেই খুব দ্রুত ইমিগ্র্যাশন লাইনে চলে যাই এবং হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল এ WIFI কানেক্টেড করে নেই, কোনো পাসওয়ার্ড লাগেনি। আর এরই মধ্যেই মোবাইল এ Viber নোটিফিকেশন পেলাম, আমাদের ড্রাইভার সে গেটে অপেক্ষা করছে।
ইমিগ্র্যাশন অফিসার হোটেল বুকিং আর রিটার্ন এয়ার টিকেটের আইটিনারির প্রিন্ট কপি ইমিগ্রেশনে দেখাতে বললো। যেহেতু ভিসা এক্সেমশন তাই কোন ভিসা ফি বা ছবি কিছুই লাগেনা। এরাইভাল সিল মেরে পাসপোর্ট হাতে দিয়ে দিল, বাহ্ কতইনা সহজ কাজ। এভাবে আপনি ৩০ দিন থাকতে পারবেন, কোনভাবেই এর মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব না। ইমিগ্রেশনে কুল থাকার চেষ্টা করবেন, মুখে হাসি নিয়ে ফ্রেন্ডলি ভাবে কথা বলবেন কোন সমস্যা হবেনা। ইমিগ্র্যাশন শেষ করে এখন ল্যাকেজের জন্য অপেক্ষা এবং অপেক্ষার ২ মিনিটের মধ্যেই ল্যাকেজে পেয়ে গেলাম, এইবার ইমিগ্র্যাশন ফর্ম পূরুন করে এয়ারপোর্ট থেকে বের হবো এবং কাছেই দেখি ডলার এক্সচেঞ্জ। ১৫০ ডলার এক্সচেঞ্জ করে ২.১ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ পেয়ে যাই। মনে মনে ভাবলাম আহ, এখন আমি মিলিওনার 🙂
চেক আউট গেটে ড্রাইভার আমার নামে প্ল্যাকার্ড হাতে দঁড়ানো। আমাকে দেখেই চিনে ফেললো (আগেই তাকে ছবি পাঠানো ছিল), ড্রাইভারের সাথে কথা বলে আমি পুরাই অভিভূত, সে ইংলিশে ফ্লুয়েন্ট। কথা বলতে বলতে আমার হাত থেকে ল্যাকেজ নিয়ে আমাদের গাড়ির সামনে নিয়ে গেলো। গাড়ি দেখেও আমি অভিভূত, খুবই ভালো যা আমাদের দেশে মন্ত্রী-এমপিরা ব্যবহার করে। গাড়িটাও খুব ভালো ছিলো, মনে হতো যেন রুমের মধ্যেই বসে আছি।
এয়ারপোর্ট টু হোটেল এবং বালিতে ১ম দিন:
কুটাতে আমাদের হোটেল বুক করা ছিল, কুটা বালির সবচেয়ে ডেভেলপড শহর। এয়ারপোর্ট কাছে হওয়াতে সবাই এখানে এসে উঠে। ডেনপাসার এয়ারপোর্ট থেকে কুটা ৮ কিমি। আর ডেনপাসার হলো বালির রাজধানী। গাড়িতে উঠে বসলাম, রাস্তা-ঘাট খুব পরিপাটি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে হোটেল এ পৌঁছে গেলাম আর এই ২০ মিনিট ড্রাইভার ভাইয়ের সাথে অনেক কথাও হলো (আমাদের দেশ, আমি কি করি, আসতে কোনো সমস্যা হলো কি না, ক্লান্ত কিনা ইত্যাদি। হোটেলে বালি টাইম দুপুর ২ টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম(বালি আমাদের চেয়ে ২ ঘন্টা এগিয়ে), ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে লাঞ্চ করতে বের হয়। আমাদের বুক করা প্রথম হোটেলটি ছিল কুটা বিচের খুবই নিকটে(হেটে যেতে ২ মিনিট), তাই রুম থেকে বের হয়ে প্রথমে একটু বিচ দেখতে যাই, দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেলো, বিচ এরিয়া খুবই পরিষ্কার এবং চমৎকার ভিউ। এবার লাঞ্চের জন্য হাঁটা শুরু করলাম, কিছুক্ষন হাঁটার পর দেখলাম রাস্তার দুইপাশেই অনেক খাবারের দোকান। ছেলে KFC দোকান দেখে বললো বাবা বার্গার খাবো, কি আর করা তিনজন মিলে KFC থেকে লাঞ্চ সেরে নিলাম, ভালোই লাগলো খারাপ না।
লাঞ্চ সেরে হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি প্রায় রাত ৮ টা, ফ্রেশ হয়ে আবার বিচের কাছে গিয়ে একটু বসলাম, কিছুক্ষন বসার পর হেটে হেটে বিচ এরিয়া ঘুরে দেখলাম। দেখে যা মনেহলো কুটা বিচ সার্ফিং এর জন্য বেস্ট। তাই অনেকে এসে ৩-৪ দিনের জন্য সার্ফিং বোর্ড ভাড়া নিয়ে এখানে সার্ফিং করে। ইন্সট্রাক্টর সহ সার্ফিং বোর্ড ভাড়া করা যায়। দেখি প্রায় রাত ১০ টা। বালিতে আবার রাত ১১ টার মধ্যে প্রায় সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
রাতের খাবার সেরে হোটেল রুমে যাই এবং ফ্রেশ হয়ে একটু বসলাম, হঠাৎ দেখি রুম কাঁপছে আর এইদিকে আমার বৌ বলতেছিলো সুমন ভূমিকম্প, ভূমিকম্প তাড়াতাড়ি নিচে চলো। তড়িগড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলাম এবং হোটেল লবিতে গিয়ে বসলাম। হোটেলের প্রায় সবাই নিচে নেমে আসলো। একটু ভয় পেয়ে গেলাম, আসার কিছুদিন আগেই বালির কাছের আরেক দ্বীপ লম্বকে (বালি থেকে দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার) দুবার ভূমিকম্প হয়েছিল, বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবং মানুষও মারা যায়। এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তি স্থলও লম্বক ছিল এবং রিখটার স্কেলে প্রায় ৭.১ মাত্রার। দুই দ্বীপের মাঝখানে ভারত মহাসাগর থাকায় বালিতে খুব বেশি কম্পন অনুভূত হয়নি।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম আজই আসলাম আর আবার ভূমিকম্প হলো। যাইহোক নিচে আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার রুমে গেলাম। রুমে যাওয়ার কিছুক্ষন পর আবারও মৃদু ভূমিকম্প, উৎপত্তি স্থলও আবার সেই লম্বক এবং আবারো নিচে নামলাম আর মনে মনে রিটার্ন করার কথা ভাবতে লাগলাম। সত্যিই সেদিন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। রুমে যেতে আর ইচ্ছা করছিলো না। পরিবার থেকে অনেক দূরে সবাই অনেক চিন্তা করবে এইভেবে দেশে কাউকে ভূমিকম্পের কথা আর বলিনি বা ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দেয় নি। মনে মনে নিজেকে আবার সান্তনা দিলাম, যাক কিছুই হবে না এসেছি যখন ঘুরেই যাই। এখানে ভুমিকম্প হয়তো জাপানের মতো সাধারণ বিষয়। যাইহোক আবার রুমে গেলাম এবং ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, স্প্রিং বিছানা একটু নড়লেই যেন মনে হয় আবার বুঝি ভূমিকম্প হচ্ছে। সারারাত তেমন একটা ঘুমই হয়নি।
বালিতে দ্বিতীয় দিন:
আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী আজ সাউথ বালি ঘুরবো আর প্ল্যানটা ছিল এরকম:
- Nusa Dua Beach (Water Activities)
Water Blow
Pandawa Beach
Padang2 beach
Uluwatu Temple
Back To Hotel
সকাল ৯.৩০ মিনিটের মধ্যে ড্রাইভার এসে কল দিলো আমরাও প্রায় রেডি, নিচে এসে গাড়িতে উঠে বসলাম এবং ড্রাইভার যাওয়া শুরু করলো। ড্রাইভারের সাথে কাল রাতের ভুমিকম্প নিয়ে কথা হচ্ছিলো এবং বললো বালিতে এইপর্যন্ত বড় কোনো ভুমিকম্প হয়নি এবং হলেও খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এমনকি ২০০৪ সালের সুনামিতেও বালিতে কোনো ক্ষতি হয়নি আর এইখানের(কুটা) বিল্ডিংগুলো ৮ মাত্রার ভুমিকম্প সহনীয়। যাইহোক অনেকটা ভয় কেটে গেলো।
যেতে যেতে ড্রাইভারকে বললাম আমার একটা সিমকার্ড লাগবে ও বললো আচ্ছা যাওয়ার পথে দোকান আছে কেনা যাবে এবং পাসপোর্ট কপি লাগবে, আমি বললাম আছে। সিমের দোকানে গিয়ে xl axiata সিমকার্ড কিনে নিলাম এবং এটাই নাকি সবচেয়ে ভালো নেটওয়ার্ক কাভারেজ বালিতে। ১০ দিন থাকবো এই ভেবে ১৫ GB ইন্টারনেট ডাটা সহ সিম নিলাম এবং দাম পড়লো ৩০০k ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ, যা প্রায় ২২ ডলার। ১ ডলার = ১৪৩০০ রুপিয়াহ বা একটু কমবেশি হয় এক্সচেঞ্জ দোকানভেদে। সিমকার্ড কিনে আবার রওনা শুরু করলাম এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই নুসা দুয়া চলে আসলাম। ওয়াটারব্লো নামে একটা জায়গা আছে। সমুদ্রের ধারে পাহাড়ে বড় বড় ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখতে যায় সবাই। সি-ওয়াক আর ওয়াটার এক্টিভিটির জন্য বেশ ভাল নুসা দুয়া। আর বালিতে আমাদের প্রধান আকর্ষন ছিল ওয়াটার এক্টিভিটিস এবং অনেক এক্সসাইটমেন্ট ছিলাম এই এক্টিভিটিস নিয়ে। সমুদ্রের তলদেশের প্রবাল, সামুদ্রিক মাছ ধরা ইত্যাদি।
আমি বলব ওয়াটার এক্টিভিটিস বালির অন্যতম প্রধান আকর্ষন। এটা এমন একটা এডভেঞ্চার যা আপনি লাইফটাইম মনে রাখতে পারবেন। আমাদের সি ওয়াকিং এর ছবি আর ভিডিওগুলো ডিভিডিতে করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দুজনের ওয়াটার এক্টিভিটিস সবকিছুর জন্য নিলো ১২০ ডলার, যার প্রকৃত মূল্য আরো বেশি এবং আমাদের কিছুটা ডিসকাউন্ট দিয়েছিলো 🙂। নুসা দুয়ার একটিভিটিস শেষে রওনা দিলাম উলুয়াটু টেম্পল দেখতে কারণ ড্রাইভার বললো আগে না গেলে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। যাওয়ার পথে মন জুড়ানো এক গ্রামীণ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে নিলাম যা অনেক দিন মনে থাকবে।
কথায় কথায় চলে আসলাম উলুয়াটু টেম্পলে, আর এই টেম্পলে প্রাপ্তবয়স্কদের এন্ট্রি ফি হল ৩০ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ বা ১৮০ টাকা। এটাও অনেক সুন্দর জায়গা যেন পাহাড় ও সমুদ্র একসাথে এসে মিলিতো হয়েছে যা নিজের চোখে না দেখলে অনুভব করা কঠিন। আর উলুয়াটু টেম্পলে অনেক বানরও আছে দেখলাম, আমার ছেলে বানর দেখে অনেক খুশি। উলুয়াটু টেম্পলে ঘন্টা দেড়েক সময় কাটিয়ে আবার গাড়িতে গিয়ে বসলাম, ডেস্টিনেশন এবার Padang2 বিচ। এই বিচটি আবার অনেকের কাছে হিডেন বিচ নামে পরিচিত, দেখতে হলে রাস্তা থেকে পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা নিচে নামতে হয় ছোট বিচ কিন্তু অনেক সুন্দর। আমার কাছে মনে হচ্ছে যেন বালির এক একটি স্পট যেন এক একটি সৌন্দর্য। দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে অন্ধকার হয়ে আসছে তাই আবার গাড়িতে উঠে বসলাম এবং হোটেলে ফিরে আসলাম। কিছুটা ক্লান্ত আর আগের রাতে ঘুম হয়নি তাই হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনার সেরে এসেই ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ আবার পরের দিন প্ল্যান আছে।
বালিতে ৩য় দিন:
আমাদের তৃতীয় দিনের প্ল্যান ছিল এরকম:
– Batterfly Farm
– Goa Gajah Temple
– Back To Hotel
ড্রাইভারকে আগেই বলে রেখেছিলাম আজ সকাল ১০ টার দিকে বের হবো, যথারীতি সে ১০ টার আগেই হাজির। আমরাও হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে রেডি। আজ যাত্রা শুরু করলাম বাটারফ্লাই ফার্ম দেখতে, এটি আমার ছেলে দেখলে খুশি হবে এই ভেবে আমাদের প্ল্যান লিস্টে রেখেছিলাম। হোটেল থেকে গাড়ি করে প্রায় দেড় ঘন্টার দুরত্ব। পৌঁছানোর পর টিকিট করতেছিলাম আর পাশ থেকে একজন নারী ইংলিশে জিজ্ঞেস করতে ছিল আমি বাংলাদেশী কিনা? আমি বললাম হা, তিনি বললো আমার হাসব্যান্ডও বাংলাদেশী। তারপর ওই বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে অনেক কথা হলো। সে কানাডা প্রবাসী এবং এক ইন্দোনেশিয়ান মেয়েকে(তিনিও কানাডা প্রবাসী) বিয়ে করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে এসেছেন(বলা যায় শশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছেন)। কথা বলে অনেক ভালো লাগলো এবং একসাথে আমরা বাটারফ্লাই ফার্ম দেখতে শুরু করলাম। অনেক রং বেরংয়ের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে, গাছের পাতায় পাতায় বসে আছে। এখানে আবার প্রজাপতির প্রজননও হয় এবং আমরা প্রজাপতি হাতে নিয়েও অনেক ছবি তুলেছি। সবমিলিয়ে ভালোই সময় কাটলো বাটারফ্লাই ফার্মে 🙂।
বাটারফ্লাই ফার্ম ভিজিট শেষে রওনা করলাম Goa Gajah টেম্পলে এবং এসে পৌঁছালাম। অনেকটা গ্রাম্য এলাকায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। বালিতে সবকিছুই টিকিট কেটে দেখতে হয়, টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসলাম মন্দিরে। মন্দিরের পরিবেশটা ভালোই এবং পরিদর্শন শেষে কিছু খাওয়ার জন্য দোকান খুজলাম এবং পাশেই দেখলাম ডাব, বিস্কুট, চকোলেটের দোকান। দুইটি ডাব নিলাম ২৫k ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ দিয়ে, আমাদের সামনেই একজন ইউরোপিয়ানের কাছে ১ টি ডাব ২০k নিলো। বালিতে সবচেয়ে বেশি আসে ইউরোপিয়ান এবং তারা সাধারণত কোনো দামাদামি করে না। আর বালির ব্যাবসায়ীরা এই সুজুগটাই কাজে লাগিয়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।
সাধারণত আপনি যদি দামাদামি না করেন তাহলে আপনাকে অনেক বেশি দামে সবকিছু কিনতে হবে, তবে আবার এটাও ঠিক সবজায়গায় দামাদামিও করা যায় না। Goa Gajah টেম্পল থেকে আমরা কিছু পছন্দসই জিনিস কিনলাম এবং হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হোটেলে ফিরে আসতে আসতে প্রায় বিকেল।
বালিতে চতুর্থ দিন:
আমাদের চতুর্থ দিনের প্ল্যান ছিল এরকম:
– Check out from current hotel
– Monkey Forrest Ubud
– Kintamani Vulcano & Lake View
– Ubud Swing Activities (Coffe plantation , Organic Proscesing Coffe & tea )
– Check In To new Hotel
হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে সকাল ১০ টার মধ্যেই চেক আউট করি এবং এরই মধ্যেই ড্রাইভার কল দিলো। আমরাও রেডি। প্রথমেই যায় Monkey Forrest, টিকিটের মূল্য ৫০k রুপিয়াহ জনপ্রতি, যা ৪ ডলারের কাছাকাছি, আর ৪ বছরের নিচে বাচ্চাদের কোনো টিকিট কাটতে হয় না। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করি, ছোট বড় মিলিয়ে অনেক বানর এবং এরিয়াও মুটামুটি বড়। আমরা ছবি তুলতে ছিলাম আর এই ফাঁকে এক বানর আমার বৌয়ের কাথ ব্যাগ থেকে জলের বোতল নিয়ে গেলো এবং বোতল খুলে ছিপি নিয়ে সে খেলায় মগ্ন হা হা হা 🙂। পুরো এরিয়া আমাদের ছেলে হেটে হেটে আমাদের সাথে এনজয় করলো। তবে প্রায়সময় গাড়িতেই সে একটা ঘুম দিতো, কখনও কখনও একটু বিরক্তও করতো, তবে সেও মানিয়ে নিয়েছে! তার জন্য গাড়িতে সবসময় খাবার রাখতাম এবং একটু কোলে নিয়েও ঘুরে বেড়াতাম। ওভারঅল সেও উপভোগ করেছে সবকিছু।
Monkey Forrest দেখা শেষে এখন কিন্তামানির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম এবং ড্রাইভার বললো ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মতো লাগবে। কিন্তামানিতে আজ আমাদের একজনের সাথে দেখা হবে যে আমাদের বালিতে ইন্টারনাল ট্রান্সপোর্ট করে দিয়েছে। তার নাম: Yan De, যেতে যেতে ড্রাইভারের কাছে তার সম্পর্কে জানলাম, কিন্তামানিতে নাকি তার অরেঞ্জ গার্ডেন আছে। কিন্তামানি পাহাড়ি এলাকা এবং আবহাওয়া অনেকটা ঠান্ডা ২০-২২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হবে তাপমাত্রা, যা বালিতে এই সময়ে ২৮-৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।
কিন্তামানিতে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে ড্রাইভার গাড়ি থামালো, এইখানে আমরা লাঞ্চ করবো এবং Yan Der সাথে দেখাও হবে। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই বাইরের বারান্দায় গিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেলো, দেখলাম আমরা অনেক উঁচুতে যা প্রায় সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৩০০০ ফিটের উপরে। আর এই ভিউ দেখতে দেখতেই লাঞ্চ করতে ছিলাম এবং Yan Der সাথে কথা হচ্ছিলো, যা অনেক দিন মনে থাকবে, খুবই চমৎকার ভিউ। কথা বলার এক ফাঁকে Yan De বললো আমি একটু আসতেছি বলে সে ১৫ মিনিট পরে হাপাতে হাপাতে ব্যাগ ভর্তি কমলা নিয়ে হাজির আর যা আমরা বালিতে থাকা পরবর্তী দিনগুলোতে খেয়ে শেষ করতে পারিনি। খুবই ফ্রেশ এবং অনেক মিষ্টি ছিল কমলাগুলো।
কিন্তামানি ভিজিট শেষে এইবার আমাদের উবুদ Swing Activities (Coffe plantation, Organic Processing Coffe & tea) এ যাওয়ার পালা। যাওয়ার পথে রাস্তার দুইপাশে শুধু অরেঞ্জ গার্ডেন আর শুধু অরেঞ্জ, কমলায় ভরপুর এবং যেদিকেই চোখ যায় সবুজের মাঝে কমলা, আহঃ নয়নাভিরাম দৃশ্য। গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই কমলা ছুঁয়া যাবে। মনে হচ্ছিলো যেন কোনো স্বর্গের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি,অপূর্ব। আর যাওয়ার পথেই Coffe plantation, Organic Processing Coffe & Tea দেখতে গেলাম এবং দেখলাম হরেক রকম চা-কফির সমাহার আর আমাদের টেস্ট করতে দিলো। এইখানের লুয়াক কফি খুবই বিখ্যাত। পুরো প্লান্টেশন এরিয়া ঘুরে ঘুরে দেখলাম, খুবই সজ্জিত। সবশেষে তাদের স্টোরে গিয়ে ৬৫ ডলারের বিভিন্ন রকম চা-কফি কিনে নিলাম 😀।
এইবার উবুদ সুইং এসে পৌঁছলাম। পাহাড়ের কিনারায় নারিকেল গাছ এবং নিচে তাকালে বুঝা যায় আমরা কতটা উপরে আর এই অবস্থায়ই নারিকেল গাছে রশি বেঁধে দোলনা বানানো হয়েছে, scared but adventure. আর আমার লাইফ পার্টনার swing এ উঠে তার কি যে ভয়, তার মনে হচ্ছিলো যেন সে পরেই যাচ্ছে বা কেউ তাকে পাহাড় থেকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। সত্যিই সে খুব ভয় পেয়েছিলো। Swing শেষে আমরা এখন আমরা হোটেলে ফিরবো, আজ সারাদিন ঘুরলাম কিন্তু কোনো ক্লান্ত নয়, বালিতে যে কয়দিন ছিলাম আমার নিজেকে কোনো ক্লান্তই মনে হয়নি আর শুধুই খেতে মন চাইতো, তাদের খাবার দাবার খুবই ফ্রেশ, খাওয়ার পর কোনো রকম অস্বস্তি অনুভব হয়নাই। অবশেষে উবুদে আমাদের বুক করা নতুন হোটেল রুমে উঠলাম। উবুদে আসলে হোটেল বলতে কর্টেজ আর গেস্ট হাউস। আমরা উবুদে সুমন্ত্র হাউস এ উঠেছিলাম, পরিপাটি এবং সুন্দর। আমি যেই রুম বুক করেছিলাম সেটার পরিবর্তে আপগ্রেড করে আমাকে ডুপ্লেক্স হাউস এ রুম দিয়ে দিলো, কোনো এক্সট্রা চার্জ দিতে হয়নি, আর পরের দিন নুসা পেনিদা ট্যুর থাকায় সকাল ৭ টার মধ্যে বের হতে হবে এবং এটা রিসিভশনে বলে রাখি এবং তারা বললো সমস্যা নেই যাওয়ার সময় আপনাদের সাথে সকালের ব্রেকফাস্টও দিয়ে দিবো। খুবই ভালো ব্যবহার ছিল। সুইমিং পোলটাও বেশ ভালো, রুমে চেক ইন করেই সুইমিং এ নামলাম আমরা তিনজন, বেশ কিছুক্ষন থেকে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েই রাতের খাবার খেতে বের হয় এবং অনেকটা হেটে বেড়াই, রাস্তার দুই পাশেই ছোট ছোট অনেক মন্দির। কিছুটা শীত শীত ভাব এবং শান্ত পরিবেশ।
বালিতে ৫ম দিন :
সকাল ছয়টার মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়ি, রেডি হয়ে একটু বারান্ধায় গিয়ে উবুদের সকালের পরিবেশটা দেখতেছিলাম, সময় আনুমানিক ৬ টা ৩৫ মিনিট আর এমনিতেই দেখি শুরু হলো আবার ভূমিকম্প এবং এটাও প্রায় ৭ মাত্রার এবং একই উৎপত্তিস্থল লম্বক। আমাদের পাশের রুমে থাকা এক অস্ট্রেলিয়ান নারী ভয় পেয়ে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় আসে, আমাদের জিজ্ঞেস করতে ছিল ভূমিকম্প কিনা, আমি বললাম হা, ভয়ের কিছু নেই এটা বালিতে স্বাভাবিক ঘটনা আর এইবার আমিও কোনো ভয় পাই নাই 😀।
এরই মধ্যে আমাদের ড্রাইভার চলে আসছে, হোটেল থেকে চেকআউট করে গাড়িতে উঠলাম। যেতে যেতে গাড়িতে বসে তাদের দেওয়া ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম, আমার ছেলে এখনো ঘুমেই 🙂, নুসা পেনিদা যেতে হলে প্রথমে সানুর বিচ যেতে হবে তারপর ৪০ মিনিটের বোট জার্নি করে ভারত মহাসাগর পারি দিয়ে নুসা পেনিদা দ্বীপে যেতে হয়, নুসা পেনিদা আয়তনে (২০২ বর্গ কিমি )মালদ্বীপের চেয়ে কিছুটা ছোট।সকাল নয়টায় আমাদের বোট ছাড়লো, বিশাল বড় বড় ঢেউ, ভারত মহাসাগর পারি দিয়ে যাচ্ছি কিছুটা হলেও ভয় হচ্ছে কিন্তু অন্য বিদেশিদের একটিভিটিস দেখে ভয় কেটে গেলো, তাদের কেউ কেউ বোটের ছাদে করে যাচ্ছে ,খুবই রোমাঞ্চকর। অবশেষে বোট নুসা পেনিদায় এসে পৌঁছাল আর আমরাও এই পার এসে আরেক গাড়িতে উঠে একে একে ঘুরতে লাগলাম:
– Broken Beach
– Angel Billabong Beach
– Kelingking Beach
– Crystal beach
নুসা পেনিদায় অধিকাংশ রাস্তাই উঁচু নিচু এবং ভাঙ্গা কিন্তু উন্নয়নের কাজও চলছে। নুসা পেনিদায় দুই বছর আগেও খুব বেশি পর্যটক আসতো না কারণ ভিতরে যাওয়ার রাস্তা ছিল না। একে একে বিচ গুলো দেখে আমরা পুরাই অভিভূত, Nusa Penidar সম্পূর্ণ সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় নিজের চোখে না দেখলে। আমি স্বর্গ কল্পনা করতে পারি, কখনও দেখতে পাবো কিনা জানি না কিন্তু আজ আমি Nusa Penidar সৌন্দর্য উপভোগ করলাম যা আমার কাছে স্বর্গের মতো মনে হচ্ছে। মনে মনে ঈশ্বরকে শুকরিয়া করলাম, আমাকে এই সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। সময় প্রায় দুপুর দুইটা এবং আমরা লাঞ্চের জন্য রওনা দিলাম, লাঞ্চ সেরে Crystal বিচে ভিজে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি কারণ বিকাল ৪ টার মধ্যে রিটার্ন বোট মিস করলেই থেকে যেতে হবে বা বোট একটু দেরি করলে যাওয়ার সময় আরো বড় বড় ঢেউ।
আমরা ফেরার জন্য বোটে গিয়ে বসলাম, বোট যাচ্ছে আর বিশাল ঢেউ, মনে হচ্ছে যেন আমাদের বোটকে উল্টিয়ে দিচ্ছে প্রায়, খুবই ভয়ানক। আমার বৌ তো ভয়ে শেষ, আমিও ভয় পেলাম আমার বাচ্চার জন্য। যাইহোক অবশেষে তীরে এসে বোট থেকে নামলাম 🙂, হোটেলে ফিরে আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা ৭ টা এবং লেগিয়ান এরিয়ায় নিও প্লাস হোটেলে চেক ইন করি, আমাদের শেষ হোটেলটা খুবই ভালো ছিল।
বালিতে ৬ষ্ঠ দিন:
আজকে আমাদের রেস্ট ডে, সারাদিন হোটেলেই কাটাই আর সুইমিং করি। বিকেলের দিকে লেগিয়ান এরিয়া ঘুরে দেখি। লেগিয়ান অনেক কোলাহলপূর্ণ এরিয়া এবং একটু ট্রাফিক জ্যামও দেখলাম। হোটেলে ফিরে হোটেল থেকেই ডিনার করি এবং রাত ৯ টার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি কারণ রাত ৩ টার মধ্যেই রওনা দিতে হবে যদি লুবিনায় গিয়ে ডলফিন দেখতে হলে। যথারীতি রাত ২ টার মধ্যেই উঠি এবং রেডি হয়ে যাই লুবিনাই যাওয়ার জন্য। কিন্তু ড্রাইভার রাস্তায় জ্যামের কারণে আসতে পারছে না, নাইট ক্লাবের জ্যাম 😀, এক পর্যায়ে ড্রাইভার বললো লুবিনা ট্রিপ ক্যানসেল করার জন্য, কারণ বেশ দেরি হয়ে গেছে এবং সকাল ৬ টাই পৌঁছানো সম্ভব নয় কারণ সূর্যের আলোতে ডলফিন আসে না। তাই ট্রিপ ক্যানসেল করে আবারোও ঘুমিয়ে পড়ি। লুবিনায় যেতে হলে উবুদ এরিয়ায় হোটেল বুক করা ভালো, কুটা থেকেও যাওয়া যায় এবং চাইলেই কুটা থেকে বালির সব স্পট কভার করা যায়।
বালিতে ৭ম দিন:
লুবিনায় ডলফিন দেখতে যাওয়া হয়নি, তাই আজকেও আমাদের রেস্ট ডে বলা যায়। হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট সেরে চলে যায় কুটা বিচে এবং অনেকক্ষণ সময় কাটাই। বালির প্রতিটি বিচ খুবই পরিষ্কার এবং পানিও খুব সচ্ছ, এককথায় ক্রিস্টাল বিচ। বিকেলে আবার বের হয় কিছু শপিং করার জন্য, বালিতে আবার অনেক জিনিসের দামও কম দেখলাম যেমন: কসমেটিক্স, ভালোমানের বিস্কিট, চকোলেট, মেসেজ অয়েল ইত্যাদি 🙂, পছন্দমতো কিছু কেনাকাটা করে নিলাম।
বালিতে অষ্টম দিন:
আজকেই আমাদের বালিতে শেষ দিনের ঘুরাফেরা এবং প্ল্যান ছিল এরকম:
– Taman Ayun Temple
– Ulundanu beratan Temple
– Twin Lake
– Yeh hoo WaterFall
– Jatiluwih Rice terrace
– Tanah Lot Temple
– Back To হোটেল
প্রতিটা স্পটেই ঘুরলাম, টার মধ্যে beratan টেম্পল, Twin লেক, Tanah Lot টেম্পল চমৎকার ছিল। আর একটা রেস্টুরেস্ট(পাহাড়ের উপর থেকে) থেকে Jatiluwih Rice Terrace দেখতে দেখতে লাঞ্চ করাটা ছিল অসম্ভব ভালোলাগার। আর আজকে পেমেন্টও দিয়েদিলাম Yan De কে, আমাদের লুবিনা ট্রিপ ক্যানসেল হওয়ায় ৫০ ডলার কম নিয়েছিল নিজে থেকেই 😀।
বালিতে ৯ম দিন:
আজ আমাদের রিটার্ন ফ্লাইট, মনটা একটু মলিন, সত্যি বলতে কি এই কয়দিনের ঘুরাফেরাই বালির প্রেমে পরে গিয়েছিলাম। বালিতে এসে বুঝলাম, জানলাম কেন এত বেশি পর্যটক বালিতে আসে। বালি আমার কাছে মনে হলো পৃথিবীর মাঝে আরেকটা ছোট্ট পৃথিবী যেন সবকিছু সাজানো-গুছানো। আর বালিতেই পৃথিবীর সব দেশ থেকে বেশি পর্যটক আসে।
যাইহোক সকাল ১০ টার মধ্যেই হোটেল থেকে চেকআউট করি এবং ড্রাইভার এসেও হাজির। দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইট। হোটেল থেকে ২০ মিনিট লাগলো এবং যেতে যেতে ড্রাইভার ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছে, দেখি তারও মন খারাপ, খুব ভদ্র একজন মানুষ এবং হাসিখুশি। বিদায় বেলায় তাকে বাংলাদেশ থেকে নেওয়া একটা কলম (বাংলাদেশ লেখা ছিল) উপহার দিলাম এবং অনেক খুশি হলো আর বললো যে অনেক যত্ন করে রেখে দিবে। আমার চোখের কোণে পানি জমে এলো, একেই বুঝি বলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। জয় হউক মানুষের ভালোবাসার। ভালো থাকুক পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ।
খরচাপাতি:
এই ৯ দিনে শপিংবাদে আমাদের তিনজনের প্রায় 2 লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।
প্লেন ফেয়ার: ১২৩ হাজার (ঢাকা-বালি-ঢাকা, মালিন্দ এয়ারলাইন্স)
হোটেল খরচ: প্রায় ২২ হাজার টাকা।
ইন্টারন্যাল রোড ট্রান্সপোর্ট: প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
একটিভিটিস + টিকেট মূল্য: প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
বাদবাকী খরচ: খাবার + অন্যান্য।
নোট:
দয়াকরে সব জায়গায় ভদ্রতা বজায় রাখুন আর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল জিনিস এখানে সেখানে ফেলবেন না। প্রকৃতি পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আপনার আমার সকলের। মনে রাখবেন ধনী-গরীব যেই হোক না কেন প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।
বালি থেকে ঘুরে আসার পর Yan De এর সাথে প্রায়ই কথা হয় এবং আজও কথা হল জানতে চাইলো আমার কি অবস্থা, আমি কেমন আছি, আবার কবে বালিতে আসবো ইত্যাদি। অনেক অনুরোধ করে বলল আবার যখন বালি আসবেন তখন যেন তার বাসায় গিয়ে উঠি, বাকি সবকিছু সে দেখবে। আমি বললাম ঠিক আছে আসলে জানাবো তোমার ব্যবসা কেমন চলছে সে বললো খুবই ভালো চলছে স্যার আর আপনার লেখাটা পাবলিশ হওয়ার পর অনেকেই আমার কাছ থেকে সার্ভিস নিয়েছে এবং তারা অনেক খুশি।
আর তাকে আমি একটা কথা বললাম বাংলাদেশ থেকে যত ভাই-ব্রাদার্স যাবে তাদেরকে যে কোন প্রকার হেল্প লাগলে যেন কোন কিছুর কমতি না হয়, সে বলল এসব বিষয়ে আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনারা যারা আমার এই লেখা পড়ে তার সার্ভিস নিয়েছেন এবং অনেকেই আমাকে পার্সোনাল ইনবক্সও করেছেনঃ আমি তার নাম্বার দিয়েছি বাকিটা আপনারাই বলতে পারবেন আসলে সে কেমন আপনাদের সার্ভিস দিয়েছে। তবে আমি তার কাছ থেকে অসম্ভব ভালো সার্ভিস পেয়েছিলাম। খুবই একজন ভাল এবং ভদ্র মানুষ।
Yan De: +6285935123723 আপনি তাকে ভাইবার বা হোয়াটসঅ্যাপ পাবেন। আরও সহজ হবে তাঁর কাছে আমার নামটি বলুন। আশা করি, তার কাছ থেকে অসম্ভব ভালো সার্ভিস পাবেন।