ইউরোপ ভ্রমণের স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, এক ভিসাতেই পৃথিবীর ২৭ টি দেশ একসাথে ঘুরে দেখা যায় বলে সেনজেন ভিসা বিশ্বের সবচেয়ে নামি ভিসা। অনেক আকাঙ্ক্ষার ইউরোপের সেনজেন ভিসা হয়। শুরু হয় যাত্রা নেদারল্যান্ডের মাধ্যমে, নেদারল্যান্ড থেকে পর্তুগাল তারপর ফ্রান্স হয়ে বাংলাদেশে আসা।
নেদারল্যান্ড ভ্রমণ – ডাচদের শহর আমাস্টারডামে ঘুরাঘুরি।
যখন প্লেন নেদারল্যান্ড এর সিপূল এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করেছে, উপর থেকে আমস্টারডাম শহরের ভিউ যতই দেখতে পাচ্ছিলাম ততই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে বাইরে এসে সুন্দর গুছানো এক শহর দেখে মন ভরে গেল। আমাস্টারডাম এর এই এয়ারপোর্ট সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১১ ফিট নিচে অবস্থিত। আর ইউরোপের এয়ারপোর্ট গুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যস্ততাময় এয়ারপোর্ট।
নেদারল্যান্ড, অনেকে সুর্যমুখী দেশ বলে থাকে, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং মানবজীবনের সম্পর্কে এক সমন্বয় হয়ে আছে। এই পৌরাণিক স্থানটি জীবনের একটি অদৃশ্য অধ্যায় হিসেবে উত্সাহ এবং আবেগে ভরা রয়েছে। যদিও আমার এই ভ্রমণটি ছিল অফিসিয়াল, তারপরও ব্যস্ততার ফাঁকে যতোটুকু সময় পেয়েছি, ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা করেছি এবং নেদারল্যান্ডের বৈচিত্র এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি।
আপনার জ্ঞাতার্থে, নেদারল্যান্ড এর আমাস্টারডাম যার চার ভাগের এক ভাগ নদী, নালা আর খালবিলে ভরা। এক সময় বেশির ভাগ সময় পানিতেই ডুবে থাকতো আমাস্টারডাম, তখন শহরের অ্যামস্টেল নদীতে বিশাল এক ড্যাম বানানো হয়। এই ড্যাম থেকে শহরের নাম হয় আমাস্টারডাম। পানি আটকানোর জন্য পুরা শহরে তৈরি করা হয় ১৬৫টি ক্যানেল বা খাল। ৯০টি ছোটবড় দ্বীপ রয়েছে শহরে। আর এগুলি যুক্ত রয়েছে প্রায় ১৫০০সেতুর মাধ্যমে। এজন্য আমাস্টারডামকে বলা হয় সিটি অফ ক্যানেল।
একটি অবাক করা বিষয় আমার চোখে পড়ে, বেশির ভাগ সেতুর নিচ দিয়ে যখন জাহাজ চলাচল করে তখন সেতু দুইভাগ হয়ে উপরে উঠে যায়, এভাবেই সিস্টেম করা। যখন সেতুর নিচ দিয়ে কোন জাহাজ পার হতে যায় তখন সেতু এভাবেই খাড়া হয়ে উপরে উঠে যায়। সেতুর উপর বাস, ট্রাম সবই চলাচল করে। ক্যানেলের উপর আছে অনেক ছোট-বড় বোট হাউজ।
ডাচরা পানির উপর জাগিয়ে তুলেছিল তাদের শহর। কথিত আছে ডাচরা বলে ‘ গড পুরা দুনিয়া সৃষ্টি করেছে আর আমাষ্টারডাম সৃষ্টি করেছে ডাচরা’। প্রায় ছয় হাজার ৮০০ ঘরবাড়ি রয়েছে শহরটিতে। এরমধ্যে ষোড়শ থেকে বিংশ শতাব্দীর তৈরি বাড়িঘর যেমন আছে তেমনি রয়েছে অত্যাধুনিক স্থাপনা। হোটেলে পৌঁছে ব্যাগ রেখেই বের হয়ে গেলাম শহরের একটা ধারনা নিতে। শহরের ডামরাক ট্যুরিষ্টদের জন্য আছে নানা ট্যুর অফিস। ওখান থেকে ট্যুরিষ্ট স্পটের সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়। কোন স্পটে কিভাবে যেতে হয় তারাই সব ব্যবস্থা করে দেয়।
আর আমস্টারডাম এমন একটি শহর যে শহরে মানুষের চেয়ে সাইকেল বেশি, সাইকেলের জন্য আমাষ্টারডাম বিখ্যাত, এমন কেউ নেউ যার সাইকেল নেই, মানুষের চেয়ে সাইকেল বেশি। এজন্য একে সাইকেলের শহরও বলা হয়। এমনকি প্রেসিডেন্ট ও সাইকেল চালিয়ে অফিস করেন। সাইকেলের জন্য আছে আলাদা রাস্তা। সব হোটেলে, সব জায়গায় সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। পুরা শহর দেখতে হলে পায়ে হেটে, ট্রামে, বোটে দেখা যায়। পর্যটকদের আমাস্টারডাম শহর ঘুরানোর জন্য আছে সিটি ট্যুর।
তবে খরচপাতির দিক দিয়ে নেদারল্যান্ড ইউরোপের অন্যতম ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি, উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি মেট্রো বা ট্রামে ওঠেন এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে যাওয়ার নূন্যতম ভাড়াও তিন ইউরো। ১ লিটার একটি পানির বোতল কিনতেও আপনাকে খরচ করতে হবে প্রায় এক ইউরোর উপর। সুতরাং নেদারল্যান্ডে আপনার একদিনে থাকা-খাওয়া সব মিলিয়ে প্রায় খরচ হবে ন্যূনতম আশি থেকে একশো ইউরো বা তার একটু বেশি।
আর নেদারল্যান্ড ভ্রমণ আমার কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ আমি এখানে একটি আইটি কনফারেন্সে জয়েন করতে গিয়েছিলাম এ-আই এবং বিগ ডাটা রিলেটেড।
এছাড়া ও নেদারল্যান্ড উঠে আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ বন্ধুত্বের ভালোবাসা অপরিসীম, বাল্যকালের বন্ধু জার্মানি থেকে চলে আসছে আমি ইউরোপ এসেছি জেনে! প্রায় ১৬ বছর পর সামনা-সামনি দেখা। আজ এই পর্যন্তই পরবর্তীতে পর্তুগালের ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে লিখব।
পরিশেষে:
এই ভ্রমণে আমার সাথে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, এবং www.sumansaha.me-এ আরও ভ্রমণের গল্প এবং টিপসের জন্য আমার ব্লগটি দেখতে ভুলবেন না।
দয়াকরে সব জায়গায় ভদ্রতা বজায় রাখুন আর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল জিনিস এখানে সেখানে ফেলবেন না। প্রকৃতি পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আপনার আমার সকলের। মনে রাখবেন ধনী-গরীব যেই হোক না কেন প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।