গত কয়েকদিন ধরে ডলার বিক্রি বা কিনতে চাওয়ার জন্য অনেকেই ইনবক্স করছেন, এমনকি ডলার প্রতি ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা দেওয়ার লোভ দেখাচ্ছেন, যা সত্যিই ভাববার বিষয়।
কমিউনিটির ভাই–ব্রাদারদের মধ্যে হয়তো অনেকেরই জরুরী প্রয়োজনে ডলার প্রয়োজন হতে পারে যেমন তাদের কোনো টুলস কিনতে বা কোন টুলসের সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে, ডিজিটাল মার্কেটিং অথবা বিদেশ থেকে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য। বিশেষ বিবেচনায়, কমিউনিটির ভাই ব্রাদারদের খাতিরে এই বিষয়গুলো কনসিডার করা যায় কিন্তু যাকে আমি চিনি না বা আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড লিস্টেও নেই আর হঠাৎ করে ১/২/৩/৪/৫ হাজার ডলার চেয়ে বসা অযৌক্তিক এবং বে–আইনি।
অনেকেই না বুঝে বা না–জেনে ডলার সেল করে দিচ্ছেন কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না আপনার দেয়া ডলারগুলো কোথায় যাচ্ছে। এমনও হতে পারে সেটা যাচ্ছে কোন গ্যাম্বলিং, কোন বেটিং অথবা কোন ইন্টারনেট ক্যাসিনোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে কোন একসময় আপনাকেও হয়তো জবাবদিহিতা করতে হতে পারে, অতএব সাবধান।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকট, খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা ব্যাপক বলে অনেকেই আইটি ফ্রিল্যান্সারদের শরণাপন্ন হচ্ছেন এবং প্রায় ১০০ টাকা পর্যন্ত ডলার প্রতি দেয়ার কথা বলছেন। আমি মনেকরি বাংলাদেশ ব্যাংক তথা যারা বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালা নিয়ে কাজ করছেন তাঁদের যদি শক্ত মনিটরিং সেল থাকত তাহলে আজ আইটি ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আরো বেশি করে ডলার জমা হতো।
এখন আসা যাক নিম্নোক্ত কোন কোন বিষয় গুলোর জন্য আইটি ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে প্রকৃত ডলার সমষ্টি জমা না হওয়ার কারণ:
১. বাংলাদেশে যে বৈধ চ্যানেলগুলোতে আইটি ফ্রিল্যান্সাররা তাদের উপার্জিত ডলার বিদেশ থেকে নিয়ে আসে, সেই ফিনটেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া যে ডলার রেট এর মধ্যে তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়। এতে করে অনেকেই বেশি মূল্যে ডলার বাইরে সেল করে দিচ্ছে।
২. বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকে ফ্রিল্যান্সারদের অর্জিত অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত ডকুমেন্টস দেয়ার পরও বিভিন্ন রকম হয়রানি বা ১০% পার্সেন্ট ট্যাক্স বসিয়ে দেয়, সেটা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জেনে হোক বা না জেনে হোক। এতে করে আইটি ফ্রিল্যান্সাররা নিরুৎসাহিত হয় ব্যাংকে ডলার উইথড্র করতে।
৩. অনেক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া যে ডলার রেট, সেই রেটের চেয়েও কম পাওয়া যায় বা তারতম্য দেখতে পাওয়া যায়। আশা করি অনেকেই তাদের এই সমস্যার কথা গুলো এই পোষ্টের কমেন্টে জানাবেন।
আপওয়ার্ক থেকে লোকাল ব্যাংকে টান্সফার দিলে সব সময় ডলার প্রতি তিন থেকে চার টাকা রেট কম থাকে। বর্তমানে যেখানে রেট ৮৯+/- টাকা, আপওয়ার্ক থেকে লোকাল ব্যাংকে পাওয়া যায় ৮৫ টাকা! আপওয়ার্ক থেকে ব্যাংকের রেট কম কেন এই বিষয়ে অনেক পোষ্ট দেয়া হয়েছে আপওয়ার্ক কমিউনিটি তে। তারা সবসময়ই বলে এটা তাদের বিষয় না, এটা ব্যাংকের ফি হতে পারে। আসলে এই ডলার প্রতি ৩/৪ টাকা কে নিচ্ছে।
৪. সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সুইফট। উপযুক্ত প্রমাণ দেওয়ার পরও অনেক সময় হয়রানি বেশি করে ব্যাংকে কিন্তু এই সার্ভিসটি সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হওয়ার কথা ছিল।
৫. বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে ৪% প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল আমি জানিনা ঠিক কি কারনে সে বিষয়টি এখনো দোদুল্যমান। এই বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন হলে আইটি ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ বহুলাংশে বেড়ে যাবে।
৬. এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক হয়রানি এবং বিভিন্ন বৈধ চ্যানেলগুলো থেকে আসা ডলারের বিপরীতে টাকার রেট এর তারতম্যের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটু জরুরীভাবে নজর দেওয়া উচিত কেন এমনটা হচ্ছে। যদি এ বিষয়টি প্রতিরোধ করা যায় তাহলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ডলারের পরিমাণ বহুলাংশে বাড়বে।
পরিশেষে, আমাদের কমিউনিটির আইটি ফ্রিল্যান্সার ভাই–বোনেরাও এই পোস্টে কমেন্টের মাধ্যমে আপনাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। বিশেষ করে কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।