অর্থ আর ক্ষমতার মোহ এমন এক চোরাবালি, যা আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষকে গ্রাস করে ফেলে। বিশেষ করে আমাদের উপমহাদেশে, যেখানে ৯৯% মানুষ এই মোহের ফাঁদে আটকে যায়। কিছুদিন আগে সোহেল তাজের একটি ভিডিও দেখেছিলাম। তিনি যে সাহসিকতার সঙ্গে ক্ষমতার মোহকে পরিত্যাগ করেছিলেন, তা দেখে আবারো তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো।
ভিডিওতে তিনি একটি কথা বলেছিলেন, যা সত্যিই মর্মস্পর্শী, বাংলাদেশের সরকার পরিচালিত হয় পরিবারতান্ত্রিক ধারা অনুযায়ী এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা যেন শোকেসে সাজানো কিছু ট্রফি। যুগের পর যুগ ধরে আমাদের দেশে যারা মন্ত্রী বা এমপি হয়েছেন, তারা এই বাস্তবতা বুঝতেন, জেনেও হয়তো মেনে নিতেন। কিন্তু কেউ সোহেল তাজের মতো হওয়ার সাহস করেননি। কেন? কারণ অর্থ আর ক্ষমতার মোহ তাদের পায়ে বেড়ি পরিয়ে রেখেছে।
একজন মানুষ হিসেবে আমি সবচেয়ে বেশি ব্যথিত হই যখন জুনাইদ আহমেদ পলক ও তার পরিবারের দিকে তাকাই। একসময় তাদের কত সুন্দর, সাজানো সংসার ছিল। কিন্তু ক্ষমতার মোহ আর অর্থের লোভ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। চোখের সামনে এমন উদাহরণ থাকার পরও, বাংলাদেশে কেউ শিক্ষা নেয় না। হয়তো ভবিষ্যতেও এ চিত্র একই থাকবে।
সবার পক্ষে সোহেল তাজ হওয়া সম্ভব নয়। যদি তা পারত, তবে আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যেত, আমরা হয়তো একটা ন্যায়ভিত্তিক সমাজ পেতাম।
মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের মতো ব্যক্তিত্বদের দিকে তাকালে এ প্রশ্নটা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। মাশরাফি, যিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক এবং সাকিব আল হাসান, যিনি বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তাদের জীবনে কি কিছু কম ছিল? অর্থ, খ্যাতি, সম্মান সবকিছুই তাদের কাছে ছিল। তারা চাইলে কি এই ক্ষমতার মোহ থেকে দূরে থাকতে পারতেন না?
তাদের মতো মানুষের ক্ষমতা বা অর্থের প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু তবুও তারা রাজনীতির মোহে পা বাড়ালেন। তারা কি চাইলেই সোহেল তাজের মতো হতে পারতেন না? সেই মোহ থেকে মুক্ত থেকে, আরও বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারতেন না?
ক্ষমতা আর অর্থের মোহ এমন এক চোরাবালি, যা দেখেইও মানুষ পা বাড়ায়। কিন্তু তাতে সান্ত্বনা নেই, নেই কোনো স্থায়িত্ব। জীবনকে সত্যিকার অর্থে উপভোগ করতে চাইলে আমাদের উচিত এই মোহের ফাঁদ থেকে মুক্ত থাকা, কারণ জীবনের সবচেয়ে বড় বিজয় সেই মানুষদের, যারা ক্ষমতার মোহকে জয় করতে পারে।
পরিশেষে, সত্যিকারের শক্তি হলো সেই মোহকে জয় করা, যা তোমার হাতে ধরা দেয় কিন্তু মনকে বন্দী করে!