একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন শহর অঞ্চলের, বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো তাদের ঘুমের সমস্যা এবং বিভিন্ন রকমের মানসিক স্ট্রেস।
সবাই হয়তো একমত হবেন যে একজন মানুষের সুস্থ থাকার প্রধান উপায় হল পরিমিত ঘুম, এই ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে যত অনিয়ম বা সমস্যা শুরু হয়।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? অনেকেই এর প্রতি হয়তো সচেতন কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ পূর্ণবয়স্ক মানুষ এই ক্ষেত্রে সচেতন নয় (বিশেষভাবে ঢাকা শহরে) কিন্তু তারা ইচ্ছে করলে এই বিষয়ে যত্ন নিতে পারে।
আমি একবার অস্ট্রেলিয় ক্রিকেটার ব্রেটলির সাক্ষাৎকারে শুনেছিলাম, তাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনাকে এই বয়সেও এত ফিট এবং সতেজ থাকার মূলমন্ত্র কি? উত্তরে ব্রেটলি বলেছিলো পর্যাপ্ত ঘুম, আমি আমার প্রাত্যহিক জীবনের যতটুকু কাজ প্রয়োজন তার বাইরে যখনি সময় পাই ঘুমের জন্য ব্যয় করি।
এখন আসি আমাদের শহর অঞ্চলের মানুষগুলো কেন ঘুমের জন্য সময় পায় না, তার প্রধান কারণ হলো অগোছালো জীবন, অগোছালো জীবন বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি তার মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলো স্মার্টফোনের অযথা ব্যবহার। তারপর আসে পরিবার এবং তাঁর জীবিকা নির্বাহ এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো।
আমরা ঢাকা শহর নিয়ে অনেক চিন্তা করি এবং ঢাকা শহরকে বিকেন্দ্রীকরণের কথাগুলো আমরা অনেকেই বলতে শুনি কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে যে বিকেন্দ্রীকরণগুলো আগে প্রয়োজন সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কখনো ভাবি না।
যেমন ধরুন সবাই চায় তার ছেলে মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়াতে, এখন ভালো স্কুলে পড়াতে হলে দেখা যাচ্ছে যে তার যেখানে বাসস্থান সেখান থেকে তার স্কুলটা হয়তো অনেক দূরে এবং আমরা সবাই জানি বাচ্চাদের স্কুলগুলো সাধারণত ঢাকা শহরে সকাল থেকে শুরু হয় এবং অনেক ভোরে উঠতে হয়।
আমি অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, ঢাকা শহরের নামিদামি যে স্কুলগুলো রয়েছে, ঢাকার বাইরে অনেক দূর দূরান্ত থেকে এই সকালবেলা স্কুলে আসে, একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার উপর তা কতটা স্ট্রেসফুল এবং সাথে বাচ্ছাদেরও।
এখানে একটু সদিচ্ছা থাকলেই নিজের মতো করে বিকেন্দ্রীকরণ করে নেয়া যায়, নিজের উপর একটু ট্রেস কমাতে। শুরুতে হয়তো কিছুটা কষ্টসাধ্য কিন্তু একবার মানিয়ে নিলে দেখবেন জীবন কতটা সহজ, সবচেয়ে বড় কথা পরিবর্তন চাইলেই সম্ভব এবং পরিবর্তন আসবেই।
অনেকেই দেখেছি এক বিভাগীয় শহরে থাকে অথচ ঢাকা শহরে এসে জব করে, টাকা খরচ করে বিমান দিয়ে যাওয়া আসা করবে তারপরও ঢাকা শহরে থাকবে। এতে মানসিকভাবে অন্য কিছুর উপর কি পরিমান প্রভাব পড়ছে, আমরা সেই বিষয়ে কখনোই খেয়াল করি না।
আমরা কিন্তু চাইলেই বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে, বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের স্কুল, নিজের কর্মস্থল এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো মিলিয়ে নিজের উপর কিছুটা চাপ কমিয়ে থাকতে পারি।
শুরুতেই বলেছিলাম অনেকেই সচেতন কিন্তু এই সচেতনতার হার যত বাড়বে মোটকথা নিজেদের মধ্যে বিকেন্দ্রীকরণের প্রভাব যত বাড়বে, আপনার উপর মানসিক স্ট্রেস এবং অন্যান্য জিনিসগুলো এমনিতেই দূর হয়ে যাবে এবং দেখবেন আপনার ঘুমের ব্যাঘাতগুলো চলে যাবে। আবারো বলছি স্মার্টফোনের ব্যবহার কমাতে হবে, বিশেষ করে রাতের সময়টা ঘুমানোর আগে।
পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে দয়াকরে সকলের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।