ইন্দোনেশিয়ার বালির দর্শনীয় স্থানসমূহ:
জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত, প্রবাল প্রাচীর, বনভূমি, আগ্নেয় পর্বতমালা, জলপ্রপাত, ধর্মীয় সাইট, সংস্কৃতি, জনপ্রিয় অববাহিকা শহর ইত্যাদির সমন্বয়ে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ পৃথিবীর শীর্ষ রোমান্টিক প্লেসগুলোর একটি।
বালি ইন্দোনেশিয়ার একটি দ্বীপ এবং প্রদেশ। প্রদেশটি বালি দ্বীপ এবং কয়েকটি ছোট ছোট প্রতিবেশী দ্বীপ নিয়ে গঠিত। বিশেষ করে নুসা পেনিডা, নুসা লাংবঙ্গান এবং নুসা কেননিকান এর অন্তর্ভূক্ত। এটি পশ্চিমে জাভা এবং পূর্বদিকে লম্বোমের সাথে কম সুনা দ্বীপগুলির পশ্চিমাংশে অবস্থিত। দ্বীপটির দক্ষিণাংশে অবস্থিত এর রাজধানী ডেনপাসার।
১. উলুয়াতু
উলুয়াতু হচ্ছে বালির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। স্থানটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রশান্তিকর পরিবেশ এবং নানারকমের বিচিত্রানুষ্ঠান পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। সার্ফিং প্রেমীদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা। সমুদ্রের বুকে খাড়া উঁচু পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এগারো শতকের সাক্ষী বহনকারী পুরনো একটি মন্দির। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীতে আকর্ষণীয় মন্দিরটি বুকিট উপদ্বীপে অবস্থিত। মন্দিরটি পাহাড়ের ৭০ মিটার উপরে অবস্থিত। এর পাশে রয়েছে বালির কিছু বিখ্যাত সৈকত ও দরুণ সার্ফিং স্পট। মন্দির গৃহের উপর অসাধারণ সূর্যাস্ত উপভোগের এ দৃশ্য কখনো ভুলার নয়।
২. কুটা সৈকত
কুটা সামুদ্রিক সৈকত হলো বালির সবচেয়ে জনপ্রিয় সৈকত। কিউটা এবং এর মতো আরো কিছু সৈকতের কারণেই বালি পৃথিবী খ্যাত পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আন্তরিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের স্বাগত জানায়। এখানকার সৈকত সমতল, বালির রঙ সাদা। যারা সার্ফিং ও ওয়ার্টার স্কিয়িং ভালোবাসেন, তাদের জন্য এ স্থানটি স্বর্গের মতো। সৈকতের কাছাকাছি অবস্থিত মার্কেটে বালি দ্বীপের বিভিন্ন ঐতিহ্যিক হস্তশিল্পকর্ম, বর্ণিল জাতীয় পোশাক এবং নানা ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। সৈকত থেকে কাছাকাছি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যেতে গাড়িতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। তাই এখানে পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি।
৩. কিন্তামানি মাউন্ট বাটুর
বালির পূর্বে অবস্থিত কিন্তামানি মাউন্ট বাতুর । মাউন্ট বাটুর এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি, ১৮০০ সাল থেকে ২৪ বার তার ঘুম ভেঙেছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সে হয়েছে অশান্ত! শেষ অগ্ন্যুৎপাত হয় ১৯৭০ সালে। পাহাড়ের কোল বেয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে জমে যাওয়া লাভা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ না করে যাবে না। মাউন্ট বাটুরের পাদদেশে লেক বাটুর বালির সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক হ্রদ। এর জলেই সিঞ্চিত বালির বেশির ভাগ ধানখেত। পাহাড় ও লেকের শোভা আরও ভাল ভাবে আস্বাদনের জন্য এর টিলার মাথায় ছোট ছোট অনেক রেঁস্তোরা রয়েছে যেখানে বসে হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনি সহজেই উপভোগ করতে পারেন।
৪. সুকাওয়াতি মার্কেট
পর্যটকদের শপিংয়ের জন্যও এক উপযুক্ত জায়গা হলো সুকাওয়াতি মার্কেট। মার্কেটটি আর্ট মার্কেট হিসেবে বিশ্বে বিশেষ পরিচিত। বড় বড় আর্ট গ্যালারিতে আঁকা ছবি, কাঠ ও পাথরের ভাস্কর্যের সম্ভার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকদের আকর্ষণের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। এ মার্কেটে আপনি চাইলে বিভিন্ন নারকম চিত্রশিল্প, বুটিকের কাপড়, হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী বালিনীজ কারুশিল্প বেশ কম দামেই কিনতে পারবেন।
৫. উবুদ
উবুদ বালির প্রাণকেন্দ্র বলে পরিচিত। অজস্র ফুলের বাগান ও পার্ক তো আছেই, তার সাথে নির্মল প্রকৃতি, ভিন্ন মানুষের বর্ণিল সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, বিশ্বখ্যাত ও মনোমুগ্ধকর মন্দির, জাদুঘরসহ সব সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে উবুদ। উত্তাল সামুদ্রিক ঢেউয়ের ওপর সার্ফিং করা এই এলাকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ । ইয়োগা ও মেডিটেশনের মাধ্যমে রিল্যাক্সেশনের সুব্যবস্থাও রয়েছে। এ সবের বাইরে উপভোগের জন্য রয়েছে নানা শিল্পকর্ম ও নাটকের প্রদর্শনী।
৬. সেমিন্যাক
আপনি যদি বালি শহরের নাইট লাইফ উপভোগ করতে চান তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসতে হবে সেমিন্যাক বীচ। সোনালি সমুদ্র সৈকত, সমুদ্রে উইন্ড সার্ফিং, ঘন সবুজ বনানী, কারুকার্যময় মন্দির ও বিদেশিদের মনপসন্দ সি ফুড এই বীচের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
৭. তানাহ্ লট
সমুদ্রের পাদদেশে পাথুরে পাহাড়ে ঘেরা তানাহ লট পর্যটকদের আরেকটি আকর্ষণের জায়গা। স্থানটি রাজসিক প্রস্তরশৈলী, যা প্রকৃতপক্ষে তীর্থযাত্রীদের জন্য পবিত্রতম একটি জায়গা। পাহাড়ের তিনটি চূড়ায় রয়েছে আলাদা করে তিনটি মন্দির। মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশিল্প, নির্মল ও শান্ত পরিবেশ আপনার ও আপনার প্রিয়তমার মনকে স্নিগ্ধ করবে। মন্দিরগুলো প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। এর কোনো কোনোটি আবার সমুদ্রের জোয়ারে ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে পদ্মফুলের মত ভাসতে থাকে এ মন্দির।
৮. আর্ট ভিলেজ
এটি বালির একটি প্রাচীন গ্রাম। নানা ধরনের হস্তশিল্পের জন্য বিখ্যাত। বালিকে পরিকল্পিত পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার সময় গ্রামটিকেও নানাভাবে সজ্জিত করা হয়। একপাশে বেশ কয়েকটি বাড়িতে শিল্পীরা রূপার অলঙ্কার বানাচ্ছে। কিছুটা এগিয়ে গেলে কাঠের কারুকাজের নানা চিত্রকর্ম আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। অনেকগুলো বাড়িতে কাঠের ভাস্কর্য ও নানা স্যুভেনির তৈরি করা হচ্ছে। যা চোখে পড়ে তাতেই মুগ্ধতা।
৯. তির্তা এম্পুল
কিন্তামনির থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ‘তির্তা এম্পুল’ বাংলায় যাকে বলা হয় পবিত্র প্রস্রবণের মন্দির। মন্দিরটি খু্বই দর্শনীয়। মন্দিরের এক পাশে রয়েছে বিস্তৃত সবুজ পাহাড়, আর অন্য পাশে রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট জলাশয় যার উৎস পাহাড় থেকে বেরিয়ে আসা এক প্রস্রবণ। মন্দিরের চত্বরে রয়েছে অনেকগুলি ছোট মন্দির ও দীর্ঘ মহীরুহের দল। স্থানীয় লোকগাঁথা অনুযায়ী এ স্থানে দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে দানবদের প্রবল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে আহত, ক্লান্ত সৈন্যসামন্তদের পুনরুজ্জীবিত করতে দেবরাজ একটি বাণ নিক্ষেপ করায় মাটি থেকে সৃষ্টি হয় ওই প্রস্রবণের। তাই স্থানীয়দের কাছে তির্তা এম্পুল মন্দির সংলগ্ন জল অতি পবিত্র। অনেক দর্শনার্থীই এ স্থানে ভ্রমণ করেন এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রস্রবণের জল মাথায় ছোঁয়ান।
১০. নুসা দুয়া
মধুচন্দ্রিমার জন্য এই সৈকত খুবই আদর্শ। এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কখনোও ভুলবার নয়। নীরব, নিঝুম একেবারে আদিম এক প্রকৃতি নিয়ে অপেক্ষা করছে এই সৈকত। আপনি মন ভরে সূর্য ও সমুদ্রস্নান দুটোই সারতে পারেন। কেননা নীল আকাশের নিচে বসে সবুজাভ জলরাশি দেখে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর মতো সুখস্মৃতি আপনার সারা জীবনের সম্পদ হয়ে থাকবে।
১১. লোভিনা
বন্য ডলফিন দেখার জন্য লোভিনা পৃথিবীর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলোর একটি। এই বীচে ডলফিন দেখার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। একধরনের নৌকার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা যাতে ভ্রমণ করে পর্যটকরা বেড়িয়ে পড়েন ঝাঁকে ঝাঁকে ডলফিনের লাফালাফি আর সাঁতার দেখার লোভে। তবে ডলফিন দেখতে চাইলে আপনাকে লোভিনা রওনা দিতে হবে খুব ভোরে।
১২. দানু ব্রাতা
উলুন দানু ব্রাতা একটি মন্দির। স্থানীয়রা একে ‘লেক টেম্পল’ বলে থাকে। লেকের একেবারে সীমানায় অবস্থিত উলুন দানু ব্রাতা মন্দিরটি সুনিপুণ গঠনশৈলী, লেকের শান্ত স্বচ্ছ জল এবং এর চারিদিকের প্রকৃত সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে থাকে। ভ্রমণপিপাসুরা অধির উৎসাহে এই স্থানটি উপভোগ করে।
১৩. বালি পাখিশালা
বালি ‘বার্ড পার্ক’ সুকাওয়াতি জেলার সিনগাপাড়ু অঞ্চলে অবস্থিত। ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় পাখিশালা এটি। ২ হেক্টর জায়গার উপর অবস্থিত এই পাখিশালাটিতে রয়েছে নানা দেশের নান বর্ণের ও বৈচিত্র্যের অসংখ্য পাখি। বেশ কয়েক প্রজাতির দুষ্প্রাপ্য পাখিও এই পাখিশালায় রয়েছে। এই পাখিশালাটি পর্যটকদের কাছে খুবেই প্রিয় বিশেষ করে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। যারা পরিবার নিয়ে আসেন বা হানিমুনে আসেন তারা এই স্থানটি একবার ঘুরে যান।
১৪. সানুর বীচ
সূর্যোদয় দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই সানুর বীচ ভ্রমণ করতে হবে। স্থানটি সূর্যোদয় দেখার জন্য বিখ্যাত। দেশবিদেশের বহু পর্যটক এ স্থানে খুব ভোর থেকে ভিড় করেন সূর্যোদয় দেখার জন্য। তাই এই স্থানটি বালির অন্যতম প্রধান পর্যটন স্পট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া শান্ত, অগভীর সানুর বীচে সার্ফিংয়ের সুব্যবস্থা রয়েছে। ভোরে সানুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ একজন ভ্রমণকারীকে স্বর্গীয় প্রশান্তি এনে দেয়।
নোট:
দয়াকরে সব জায়গায় ভদ্রতা বজায় রাখুন আর প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল জিনিস এখানে সেখানে ফেলবেন না। প্রকৃতি পরিস্কার রাখার দায়িত্বও আপনার আমার সকলের। মনে রাখবেন ধনী-গরীব যেই হোক না কেন প্রকৃতির কাছে আমরা সবাই সমান।
One thought on “ইন্দোনেশিয়ার বালির দর্শনীয় স্থানসমূহ!”